শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

কিডনি রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

কিডনি রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

কিডনি রোগের বর্ণনা ঃ

কিডনি দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ।কিডনি রোগ খুব নীরবে শরীরের ক্ষতি করে।খুব জটিল অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত লক্ষণগুলো ভালোভাবে প্রকাশও পায় না। তাই কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো আগে থেকেই জেনে রাখা জরুরি।

কিডনি রোগের লক্ষণ ঃ
প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়া কিডনির সমস্যার আরেকটি লক্ষণ।মূলত প্রস্রাবের সময় ব্যথা,জ্বালাপোড়া-এগুলো ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ। যখন এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে তখন জ্বর হয় এবং পিঠের পেছনে ব্যথা করে।সুস্থ কিডনি সাধারণত ব্লাড সেল গুলোকে শরীরের ভিতরে রেখে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ মূত্র হিসেবে বাইর করে দেয়।যখন কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন ব্লাড সেল বের হতে শুরু করে।প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়ার এই লক্ষণটির কিডনি রোগের সাথে সাথে টিউমার,কিডনি পাথর বা ইনফেকশনেরও ইঙ্গিত হতে পারে।প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে এটি খুবই ঝুঁকির বিষয়।এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষণ।কিডনি রোগের একটি বড় লক্ষণ হলো প্রস্রাবে পরিবর্তন হওয়া।কিডনির সমস্যা হলে প্রস্রাব বেশি হয় বা কম হয়।বিশেষতঃ রাতে এই সমস্যা বাড়ে।প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়।অনেক সময় প্রস্রাবের বেগ অনুভব হলেও প্রস্রাব হয় না।যদি আপনার প্রায়ই মূত্রত্যাগের প্রয়োজন হয় বিশেষ করে রাতের বেলায় তাহলে এটা কিডনি রোগের লক্ষণ।যখন কিডনির ছাঁকনি গুলো নষ্ট হয়ে যায় তখন প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পায়।ঘন ঘন মূত্রত্যাগ ইউরিন ইনফেকশনের ও লক্ষণ হতে পারে,পুরুষের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট গ্লেন্ড বড় হয়ে গেলেও এই উপসর্গ দেখা দেয়।কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য এবং বাড়তি পানি বের করে দেয়।কিডনিতে রোগ হলে এই বাড়তি পানি বের হতে সমস্যা হয়। বাড়তি পানি শরীরে ফোলা ভাব তৈরি করে।লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার কারণে মস্তিস্কে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়।এতে কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়।কিডনির কর্মক্ষমতা যখন মারাত্মক ভাবে কমে যায় তখন রক্তে অপদ্রব্য হিসেবে টক্সিন উৎপন্ন হয়।এর ফলে আপনি দুর্বল ও ক্লান্ত অনুভব করেন এবং কোন বিষয়ে মনোযোগ দেয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।আরেকটা জটিলতা দেখা দিতে পারে,আর তা হচ্ছে এনেমিয়া।রক্তস্বল্পতার কারণেও দুর্বলতা বা অবসাদগ্রস্ততার সমস্যা হতে পারে।কিডনি রোগ হলে গরম আবহাওয়ার মধ্যেও শীত শীত অনুভব হয়।আর কিডনিতে সংক্রমণ হলে জ্বরও আসতে পারে।কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়লে রক্তে বর্জ্য পদার্থ বাড়তে থাকে।এটি ত্বকে চুলকানি এবং র‍্যাশ তৈরি করতে পারে।রক্তে বর্জ্যনীয় পদার্থ বেড়ে যাওয়ায় কিডনির রোগে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার সমস্যা হতে পারে।কিছু কিছু কিডনি রোগে শরীরে ব্যথা হয়।পিঠের পাশে নিচের দিকে ব্যথা হয়।এটিও কিডনি রোগের একটি অন্যতম লক্ষণ।যখন কিডনি রক্ত পরিশোধন করতে অপারগ হয় তখন রক্তের টক্সিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বাহির হতে পারেনা বলে রক্তেই থেকে যায়।যার কারণে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হয়।অবেসিটি বা স্থূলতার সাথে ক্রনিক কিডনি ডিজিজের যোগসূত্র আছে। এবং নিদ্রাহীনতা ক্রনিক কিডনি ডিজিজের একটি সাধারণ উপসর্গ।সুস্থ কিডনি অনেক গুরুত্ব পূর্ণ কাজ করে থাকে।কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল বাহির করে দেয়, লাল রক্ত কণিকা তৈরি করে,হাড়কে শক্তিশালী করে এবং খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে। শুষ্ক ও ফেটে যাওয়া ত্বক খনিজ ও হাড়ের অসুখের জন্য ও হতে পারে যা অ্যাডভান্স কিডনি রোগের সহগামী হিসেবে থাকতে পারে যখন কিডনি রক্তের পুষ্টি উপাদান ও খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনা।প্রস্রাবে অনেক বেশি ফেনা দেখা দিলে বুঝতে হবে যে,প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন যাচ্ছে।ডিমের সাদা অংশ ফাটানো হলে যেমন ফেনা হয় প্রস্রাবের এই বুদবুদ ও ঠিক সেই রকম।প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নামক প্রোটিনের উপস্থিতির জন্যই এমন হয়। কিডনির ফিল্টার ড্যামেজ হয়ে গেলে প্রোটিন লিক হয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয় বলে প্রস্রাবে ফেনা দেখা দেয়।যখন কিডনি অনেক বেশি লিক করে তখন প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায় বলে চোখের চারপাশে ফুলে যায়।কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে পা এবং গোড়ালি ফুলে যায়। পায়ের নীচের অংশ ফুলে যাওয়া হার্ট,লিভার এবং পায়ের শিরার দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।এটা খুবই সাধারণ সমস্যা কিন্তু শরীরে টক্সিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার ফল স্বরূপ ক্ষুধা কমে যায়।কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট হলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা এবং মাংসপেশিতে খিল লাগার সমস্যা দেখা দেয়।যেমন-ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা কমে গেলেও মাংসপেশিতে খিল লাগার সমস্যা দেখা দেয়।

কিডনি রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধসমুহের লক্ষনভিত্তিক আলোচনা ঃ

একোনাইট নেপিলাস:ঠান্ডা লাগিয়া ,শীতকরিয়া জ্বর,জ্বালাকর কষ্টকর প্রস্রাব ,অস্হিরতা,ছটফটানি,মৃত্যুভয় ইত্যাদি লক্ষণযুক্ত রোগীর একোনাইট নেপিলাসের উপযোগী।

এপিস মেল:কোমরে কিডনিতে বেদনা ,চাপে বা গরমে বেদনা বাড়ে।ঠান্ডায় আরাম পায়।প্রস্রাব কম মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে।সর্বশরীরে ফোলা বা শোধ।চোখের নিচের পাতা অধিক ফোলা,পিপাসাহীন,চর্ম শুষ্ক, ইত্যাদি লক্ষণে এপিস মেল জরুরী প্রয়োজন।

বার্বারিস ভলগারিস:কোমরে কিডনিতে সুচ ফোটানো বেদনা,জ্বালাযুক্ত বেদনা,কিডনির বেনা পায়ে ছড়িয়ে যায়।বাম কিডনিতে বেদনা বেশী,চাপে টিপিলে বাড়ে,নড়াচড়ায় বাড়ে।কষ্টকর প্রস্রাব ইত্যাদি লক্ষণ যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তাকে জরুরী বারবারিস ভলগারিস দেয় প্রয়োজন।

লাইকোপোডিয়াম:ডান বা বাম কিডনিতে বেদনা সেই বেদনা লিঙ্গে বা পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।বিকাল ৪টা হইতে রাত ৮টার মধ্যে রোগ বারে।মুত্রে ইটের গুড়ার মত তলানি জমে সেই রোগীর জন্য লাইকোপোডিয়াম উপযোগী।

টেরিবিন্থিনা:কিডনিতে ভয়ানক বেদনা ও জ্বালা।রক্ত মিশ্রিত অল্প পরিমানে প্রস্রাব,কোন প্রকার ঠান্ডালাগিয়া কিডনিতে টাটানি বেদনা ও জ্বালা হলে উপযোগী।

সলিডেগো:কিডনির বেদনা সেই বেদনা অাস্তে আ্স্তে পেটে ও মুত্রথলিতে ছড়াইয়া পরড়।কিডনিতে চাপ লাগিলে বেদনা বাড়ে।প্রস্রাব পরিমানে কম,প্রস্রাব ত্যাগে ভীষণ কষ্ট হলে সলিডেগো উপযোগী।

মার্ক সল:এক বা উভয় কিডনিতে বেদনা সেই নবদনা মাঝে মাঝে মুত্র থলিতে ও উরুতে যায়।রোপগ নরাচরায় কাতর হয়,চিৎ হইয়া শুইলে বাড়ে,অল্প প্রস্রাব,ঘনঘন প্রস্রবের বেগ, জ্বালা ও কোথানি থাকে তবে রোগীর জন্য মার্ক সল উপযোগী।

কিডনিরোগের বাইয়োকেমিক চিকিৎসা:

ফেরম ফস:গায়ে জ্বরসহ কিডনিতে বেদনা।রোগের প্রথম অবস্হায় জরুরী প্রয়োজন।

কেলিমিউর:কোষ্ঠ বদ্ধ জিহ্বা সাদা রোগীর কিডনির বেদনায় কেলিমিউর উপযোগী।

ক্যালকেরিয়া সালফ:রক্ত স্বল্প দর্বল রোগী প্রস্রাবে ক্ষয় কোমর বেদনার রোগীর জন্য উপযোগী।

কেলি ফস: কিডনি রোগীর ক্যালকেরিয়া ফসের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে ব্যবহৃত হয়।

উপদেষ: রোগীর যাতে ঠান্ডা না লাগে সে দিকে খেয়াল রাখা ও পশমি কাপড় জরিয়ে রাখা প্রয়োজন যাতে ঠান্ডা না লাগে।রোগীকে সম্পুর্ন বিশ্রামে রাখা জরুরী।
আমার ফ্রী মোবাইল এপসটি ডাউনলোড করুন এবং আমার সকর লেখা আপডেট নিন নিয়মিত।


ডা:ইয়াকুব আলী সরকার
ইভা হোমিও হল।
বাইপাইল, সাভার, ঢাকা।
গভ:রেজি নং#23876.
মোবাইল .01716651488

1 টি মন্তব্য: