ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস একটি বিপাকজনিত রোগ। আমাদের শরীরে ইনস্যুলিন নামের হরমোনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় তা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এই সামগ্রিক অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে। এই রোগে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দীর্ঘস্থায়ীভাবে বেড়ে যায়। সুস্থ লোকের রক্তে প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৫.৬ মিলি মোলের কম এবং খাবার দুই ঘণ্টা পরে ৭.৮ মিলি মোলের কম থাকে। অভুক্ত অবস্থায় রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ ৭.১ মিলি মোলের বেশি হলে অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ ১১.১ মিলি মোলের বেশি হলে ডায়াবেটিস হয়েছে বলে গণ্য করা হয়।ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স কি ?
ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয়। কিন্তু যা সঠিকভাবে কাজ করে না অর্থাৎ শরীরে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা সঠিকভাবে কমাতে পারে না। কোনো ব্যক্তির শরীরে ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স হলে পরবর্তীতে তার ডায়াবেটিস দেখা দেয়, সাধারণত টাইপ-২ ডায়াবেটিস।
ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স হলে সাধারণত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, তন্ত্রাচ্ছন্ন ভাব থাকে। মস্তিষ্কস্থূলতা দেখা দেয়, ওজন বাড়ে। শরীরে চর্বি জমে, রক্তচাপ বাড়ে, ক্ষুধা ও তৃষ্ণা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিসের কারণ, লক্ষণ ও জটিলতা :
কার্বোহাইড্রেটের বিপাকক্রিয়ার গোলযোগের কারনে ডায়াবেটিস হয় ।দেহে ইনসুলিনের অভাব ঘটে ।ইনসুলিনের অভাবে রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে যায় ।গ্লুকোজের ওসমোটিক ক্রিয়ার ফলে পলি ইউরিয়া জন্মায় ।এর ফলে শরীরের শক্তি ও পুষ্টির অভাব হয় ।রোগীর শরীরে চুলকানী,ঘন ঘন প্রস্রাব হয় জ্বালাপোড়া করে,যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া ,মাংশপেশীর সংকোচন শক্তির ঘাটতি হয়,চামড়া শুস্ক,খসখসে হয়,হজমে গোলযোগ দেখা যায়,মেজাজ খিটখিটে হয়,লিভারের রোগ,দৃষ্টি শক্তির অভাব হয়,রক্তচাপ বাড়ে,যৌন দুর্বলতা তথা ধ্বজভংগ রোগ হয়,মাথার চুল পড়া,কিডনীরোগ হয় মোট কথা শরীরের সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারায়।
সংক্ষেপে ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহ
ক. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
খ. খুব বেশি পিপাসা লাগা
গ. বেশি ক্ষুধা পাওয়া
ঘ. যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া
ঙ. ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা
চ. ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হওয়া
ছ. খোস-পাঁচড়া, ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেওয়া
জ. চোখে কম দেখা।
ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় উপায়
রক্তের গ্লুকোজের মাত্রার ঐনঅ১প% পরিমাপ করে ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে হয়। সুস্থ ব্যক্তির রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৬.১ মিলি মোলের কম এবং খাবার ২ ঘণ্টা পরে ৭.৮ মিলি মোলের কম অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ ১১.১ মিলিমোলের কম থাকে। কোনো ব্যক্তির রক্তের প্লাজমায় অভুক্ত অবস্থায় গ্লুকোজের পরিমাণ ৭.০ মিলি মোল বা তার বেশি হলে এবং খাবার খাওয়ার অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ ১১.১ মিলি মোল বা তার বেশি হলে অথবা রক্তের ঐনঅ১প ৬.৫%-এর বেশি হলে তাকে ডায়াবেটিস রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ ও তাদের পার্থক্যসমূহ
টাইপ-১, ২. টাইপ-২, ৩. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। ৪. অন্যান্য নির্দিষ্ট কারণভিত্তিক শ্রেণী।
টাইপ-১
এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না। সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সে এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য এসব রোগীকে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতেই হয়। অন্যথায় রক্তের শর্করা অতি দ্রুত বেড়ে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই রক্তে অম্লজাতীয় বিষক্রিয়ায় অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
টাইপ-২
এই শ্রেণীর রোগীর বয়স অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ত্রিশ বছরের ওপরে হয়ে থাকে। আজকাল ত্রিশ বছরের নিচেও এ ধরনের রোগীর সংখ্যা দেখা দিচ্ছে ও দিনে দিনে বেড়ে চলছে। এদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয়। তবে, প্রয়োজনে ইনসুলিন ইনজেকশন না দিলে টাইপ-১ রোগীর মতো এদের বিষক্রিয়া হয় না। অর্থাৎ এরা ইনসুলিন নির্ভরশীল নয়। অনেক ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়ামের সাহায্যে এদের চিকিৎসা করা সম্ভব।
এখন বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগটি মানবদেহে দ্রুত বাড়ছে। লাখো মানুষ শর্করার মাত্রার বাড়ার কারণে এ রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের যে কয়টি উপায় রয়েছে তা হলো:ব্যায়াম,খাদ্যনিয়ন্ত্রন,স্বাস্হবিধি পালন,সঠিকখাদ্য তালিকা,ধ্যান ইত্যাদি।
খাদ্য:নিচের খাদ্যগুলি আপনার খাদ্যতালিকায় রাখলে আপনার ডায়াবেটিস সহজেই নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
নয়নতারা খুব পরিচিত একটি ফুল। এ ফুলগাছের সব অংশই তেতো। প্রতিদিন সকালে দু’টি পাতা খালি পেটে চিবিয়ে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে।তেতো করলা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
মেথি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বীজ। মেথি দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ।এটি হজমে খুব সহায়ক। মেথি গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিরাতে রাতে দুই টেবিল চামচ মেথি পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পানি আলাদা করে খালি পেটে এই পানি পান করুন। এতে ডায়াবেটিসহ বিভিন্ন রোগের উপকার পাবেন।তুলসি অ্যান্টি -অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং নিম পাতার রয়েছে ওষুধি বৈশিষ্ট্য। নিমপাতা ও তুলসি পাতা ডায়াবেটিস নিরাময়ে ভালো কাজে দেবে। পাঁচটি পুদিনা পাতা ও নিমপাতা পানিতে ধুয়ে খালি পেটে চিবিয়ে খেলে ভালো উপকার পাবেন।কালো জাম গ্রীষ্মকালীন ফল। এটি রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবচেয়ে ভালো ফল হিসেবে অন্যতম।ঢেঁড়স ফাইবারসমৃদ্ধ সবজি। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস নিরাময় করতে রাতে এক গ্লাস পানির মধ্যে একটি ঢেঁড়স কেটে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে গ্লাস থেকে ঢেঁড়স তুলে খালি পেটে এই পানি পান করুন।মিষ্টি কুমড়া অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি। ডায়াবেটিক রোগীরা এ সবজি খেলে তাদের ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাছাড়া মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। ফলে চোখের সমস্যা দূর করে ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
হাটা: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তে শর্করা প্রতিরোধ করতে সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিকার অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা। প্রথমে ধীরে ধীরে পরে জোরে হাঁটার অভ্যাস করুন। এতে ক্যালোরি ও অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করবে।করবে।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় বাইয়োকেমিক ঔষধ নির্বাচনের গাইড লাইন :
*ক্যালকেরিয়া ফস:রোগী ঘনঘন প্রস্রাব,পরিমানে বেশী প্রস্রাব,হাড় ও পেশীতে বেদনা,সমস্ত শরীর ঠান্ডা ভাব থাকে ।উক্ত লক্ষণ সমষ্টি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তার জন্য প্রয়োগ করলে স্বাভাবিক জীবন সম্ভব।মাত্রা:6x,12x,শক্তির ঔষধ বড়দের চার বড়ি,ছোটদের দুই বড়ি দিনে খাওয়ার পরে চার বার গরম পানিতে খাইতে হবে।
* ফেরম ফস:-রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান কম,শেরীরের যে কোন অংশের রক্তক্ষরণ,বার বার প্রস্রাবের বেগ,মুত্রথলিতে বেদনা,শরীর দুর্বলতা লক্ষনগুলি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তাকে এই ঔষধটি দিবেন রোগ লক্ষণ দুর হবে ।।মাত্রা:6x,12x,শক্তির ঔষধ বড়দের চার বড়ি,ছোটদের দুই বড়ি দিনে খাওয়ার পরে চার বার গরম পানিতে খাইতে হবে।
*কেলি ফস:-রোগী অত্যন্ত স্নায়ুবিক দুর্বল,কাজে কর্মে উৎসাহহীনতা,মনমরা ভাব,ক্লান্তি বোধ,অসারে মুত্রত্যাগ, পিঠে বেদনা,হাত পা অবস,পক্ষাঘাতগ্রস্হ যৌন দুর্বলতা লক্ষনগুলি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তাকে এই ঔষধটি দিবেন রোগ লক্ষণ দুর হবে রোগী সুস্হ্যতা বোধ করবে।।মাত্রা:6x,12x,শক্তির ঔষধ বড়দের চার বড়ি,ছোটদের দুই বড়ি দিনে খাওয়ার পরে চার বার গরম পানিতে খাইতে হবে ।
*নেট্রাম ফস:-যে রোগীর প্রস্রাবে ল্যাকটিক এসিডের পরিমান বৃদ্ধি পায়,শর্করার পরিমান বৃদ্ধি পায়,টক উদগার উঠে,হাটু হাত পার গাউট বেদনা হয়,সেইসকল রোগীর সুগারের পরিমান কমাইতে জরুরী প্রয়োজন ও উপরে উল্লেখিত লক্ষনগুলি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তাকে এই ঔষধটি দিবেন রোগ লক্ষণ দুর হবে রোগী সুস্হ্যতাবোধ করবে।।মাত্রা:6x,12x,শক্তির ঔষধ বড়দের চার বড়ি,ছোটদের দুই বড়ি দিনে খাওয়ার পরে চার বার গরম পানিতে খাইতে হবে।
*নেট্রামসালফ:-লিভারদোষযুক্ত,ঘনঘনমুত্রত্যাগ,কিডনীরোগী,প্যানক্রিয়াসের সমস্যাসহ,মুত্রে প্রচুর সুগার নি:স্বরণ , উল্লেখিত লক্ষনগুলি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তাকে এই ঔষধটি দিবেন রোগ লক্ষণ দুর হবে রোগী সুস্হ্যতাবোধ করবে।।মাত্রা:6x,12x,শক্তির ঔষধ বড়দের চার বড়ি,ছোটদের দুই বড়ি দিনে খাওয়ার পরে চার বার গরম পানিতে খাইতে হবে।
*কেলি মিউর :-জিহ্বাহ সাদা কোষ্ঠবদ্ধ,উল্লেখিত লক্ষনগুলি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তাকে এই ঔষধটি দিবেন রোগ লক্ষণ দুর হবে রোগী সুস্হ্যতাবোধ করবে।।মাত্রা:6x,12x,শক্তির ঔষধ বড়দের চার বড়ি,ছোটদের দুই বড়ি দিনে খাওয়ার পরে চার বার গরম পানিতে খাইতে হবে।
বাইয়োকেমিক কম্বিনেশন সাত(৭) নংঃ সাধারনত: সকল ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রেই দেওয়া যায়।
অর্গানন অব মেডিসিন অনুসারে রোগীর সকল লক্ষণ সমষ্টি বিবেচনায় কি ঔষধ দেয়া প্রয়োজন সেই বিষয়টি দক্ষ ডাক্তারই জানেন।আমার লেখা নতুন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারগনের উপযোগী করে।কেউ যদি লেখা পড়ে ডাক্তারী শুরু করেন তবে ভুল করবেন।হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা একটি জটিল ঔষধ নির্বাচন পদ্ধতি। আপনারা কখনও একা একা ঔষধ কিনে ডাক্তারী করবেন না।ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
ডা: ইয়াকুব আলী সরকার
ইভা হোমিও হল
বাইপাইর,সাভার,ঢাকা।
গঃ রেজিঃ নং ২৩৮৭৬।
মোবাইল নং ০১৭১৬৬৫১৪৮৮
মোবাইল নং ০১৭১৬৬৫১৪৮৮
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন