শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭

পিটুইট্যারাম পোষ্টেরিয়াম পরিচয় ও প্রয়োগক্ষেত্রঃ

পিটুইট্যারাম পোষ্টেরিয়ামের পরিচিতি ও প্রয়োগ ক্ষেত্র।



পিটুইট্যারাম পোষ্টেরিয়াম ঃ

পিটুইট্যারাম পোষ্টেরিয়াম বা পিটুইটারীয়া গ্ল্যাণ্ডিওলা ঔষধটি পিটুইটারী গ্ল্যাণ্ডের পেছনের অংশ হতে তৈরি করা হয়েছে।ভেড়ার পিটুইটারী গ্র‌্যান্ডের পেছনের অংশকে পানি, এলকোহল এবং গ্লিসারিনের সাথে মিশিয়ে নির্যাস তৈরি করে শক্তিকৃত করা হয়েছে।পিটৃইটারী গ্রন্থির পেছনের অংশটুকু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য পিটুইটারী গ্রন্থি হতে নিঃসৃত হরমোন কিডনীকে পানি শোষনের জন্য সাহায্য করে।এছাড়াও এই হরমোন শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করে,যখন অতিরিক্ত পরিমানে এ হরমোন শরীরে প্রবেশ করানো হয় তখন জরায়ুর প্রতিক্রিয়া এবং রক্তনালীকে সংকোচিত করে যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। হরমোনটির একটি অক্সিটোসিন আলাদা করা হলে এই হরমোন রক্তনালীকে আর সংকোজন করতে পারে না।
হোমিওপ্যাথিক মতে ১৯৩৫ সালে হেরিং-এর প্রুভিং কমিটি ৫জন প্রুভারের উপর 12X শক্তির পিটুইট্যারাম পোষ্টেরিয়াম ঔষধটি প্রয়োগ করেন এর প্রুভিং লক্ষণগুলো লিপিবদ্ধ করেন এবং The pacific coast Journal of Homeopathy(521-522X পৃঃ)-তে এসব লক্ষণ প্রকাশ করা হয়।
প্রয়োগ ণক্ষণ: উদ্দেগ ও দুর্বল মনের রোগী, মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ,স্তনের সমস্যা, কোলনের প্রদাহ,বৃদ্ধি কমে যায় বা দেরীতে হয়,উচ্চ রক্তচাপ,প্রস্টেট গ্ল্যাণ্ডের প্রদাহ, মাথাঘোরা,ত্বক শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি রোগে এটি প্রয়োগ হয়।
ধাতুগত বৈশিষ্ট্য:ফসফরিক, ফ্লোরিক টাইপ, টিউবারকুলার অথবা সিফিলিটিক ধাতুর মানসিক বা মানসিক অবসাদের বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। টিউবারকুলার এবং সিফিলিটিক ধাতের উপর বিশেষভাবে কাজ করে।
• উচ্চ রক্তচাপ, পুরাতন মূত্রাশয় প্রদাহ, মাথাঘোরা, মাথায় ভারবোধ।
• বৃদ্ধ বয়সে পুরুষের প্রস্টেট গ্ল্যাণ্ডের অসুখের কারণে মূত্রত্যাগে কষ্ট বা শয্যামূত্র।
• প্রসবকার্যে সহায়তা ও প্রসবের পরবর্তী রক্তস্রাব।
• চোখের তারা বড়, চোখ হতে জল পড়ে। দৃষ্টিশক্তি হারায়।
• গর্ভাবস্থায় মুখমণ্ডলে কাল ছোপ পড়ে।
• মুখে লালা আসে। বমি-বমিভাব।
• কিডনীর অক্ষমতায় শরীরে তরল জমে যায়। শোথ দেখা দেয়। প্রস্রাবে এলবুমিন পাওয়া যায়, মূত্র শর্করা থাকে। ক্লোরাইড, পটাশিয়াম, সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়।
• শ্বাসকষ্ট, বুক যেন আটকে আসে। স্তনে দুধ বেড়ে যায়।
• প্রচুর ঘাম হয়।ঠাণ্ডা চর্ম, চামড়া কালো হয়ে যায়, চামড়ায় আমবাত দেখা দেয়।

মানসিক লক্ষণ: উদ্ভিগ্নতা, রাতে বারে।পুরুষত্বহীনতার ভয়,প্রস্রাবে ভয়।রাতে তীব্র দৈহিক যাতনা।শারীরিক ও মানসিক কষ্টের চিন্তা করে,বিশেষত প্রেম-সমন্বয়ী পুরুষত্বহীনতার।

পেট: ক্ষুদ্রান্ত ও কোলনের প্রদাহ,পায়ুপথের প্রদাহ, কোলনের ক্ষত।পিত্তথলীর প্রদাহ।

পিঠ: ঘাড়ের সন্ধির পিছনের দিকে ব্যথা, ব্যথা মাথার পিছন দিক দিয়ে কাঁধে ছড়িয়ে পড়ে। ঘার ব্যথা। পিঠ ব্যথা।

স্তন: স্তন স্বাভাবিকের তুলনায় বড় হয়ে যায়। স্তনে দুধ বেড়ে যায়।

বুক: শ্বাসকষ্ট, বুক যেন আটকে আসে।

কান: কানে গুঞ্জন শব্দ কোন কিছুতেই কমে না। কান ব্যথা। বাম কানে বধিরতা, শুনতে পায় না।

চোখ: চোখের তারার অস্বাভাবিক প্রসারণ। রোগি কোন কারণ ছারাই কাঁদতে থাকে, পানি পরে।দৃষ্টিশক্তি হারায়।

স্ত্রী জননাঙ্গ: কষ্টকর সন্তান প্রসব। ব্যথাযুক্ত মাসিক ঋতুস্রাব বিশেষতঃ মাসিক শুরুর সময় এবং শেষের সময়। মাসিক স্রাব অল্প পরিমানে হয়। মাসিকের সময় ব্যথা। মাসিক দেরীতে হয়। দিনের বেলা ব্যথা অনুভূত হয়। জরায়ুর মাংশপেশী সংকোচনের সময় ব্যথা-সন্তান প্রসবের সময়।

মাথা(Head): মাথার চুল পড়ে যায়(Alopecia), যা খুবই শুকনো। দপদপানি মাথা ব্যথা-উচ্চরক্তচাপের সাথে সম্পর্কযুক্ত। মাথা ব্যথা মাথার পিছন দিক থেকে শুরু হয়ে সারভাইক্যাল কলাম এবং কাঁধে ছড়িয়ে পড়ে। মাথা ব্যথা তাপে, বিকালে বাড়ে। রক্তসঞ্চয় জনিত মাথাব্যথা(Congestive Headache)।

হৃৎপিণ্ড(Heart): বুকে ভারবোধ, নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। রোগি তার হৃৎপিণ্ডের অনুভূতি অনুভব করতে পারে। হৃৎপিণ্ড সংকোচন বোধ-একটু নড়াচড়া করলে বাড়ে। ক্যারোটিড ধমনীতে উচ্চ রক্তচাপ। করোনারি ধমনীতে প্রদাহ। হৃৎশূল। হৃৎপিণ্ডের ভাল্বের সমস্যা। সেপটিসেমিয়া। হৃৎপিণ্ডে ব্যথা। হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক দ্রুত কার্য(Tachycardia)। উচ্চ রক্তচাপ।

কিডনী(Kidneys):কিডনীর অক্ষমতায় শরীরে তরল জমে যায়,শোথ দেখা দেয়,প্রস্রাবে এলবুমেন পাওয়া যায়।মূত্রে শর্করা থাকে।ক্লোরাইড,পটাশিয়াম, সোডিয়ামের পরিমান বেড়ে যায়।কিডনীর প্রদাহ।

ফুসফুস(Lungs):হাঁপানি,হাঁপানিজনিত শ্বাসকষ্ট,যার ফলে নাড়ি ভূড়ি এবং পায়ুপথে সংকোচনবোধ হয়।
কফে-পানির মত এবং তিক্ত স্বাদ।শ্বাসকষ্ট বুক যেন আটকে আসে।

মুখ(Mouth):গর্ভাবস্হায় মুখে কাল ছোপ পরে।মুখ হতে অতিরিক্ত লালাস্রাব। নোনতা স্বাদের লালাস্রাব।বমি বমি ভাব।
নাক(Nose):নাক হতে তরল সর্দিস্রাব নির্গত হয়।

রেকটাম(Rectum):পেট ব্যথাসহ ডায়রিয়া।পায়খানা করার ইচ্ছা পায়খানায় যায় কিন্তু করতে পারে না। রেকটাম প্রদাহ।পায়ুপথে রক্তস্রাব।

পাকস্থলী(Stomach):বমি বমি ভাব, বমি হয়, বিকালে খাবার পর বারে।

গলা(Throat):টনসিল প্রদাহ, ফ্যারিঙ্কজাইটিস।গলা ব্যথা,ঢোক গিলতে কষ্ট।

চর্ম(Skin):ত্বক ঠাণ্ডা, চামড়া কালো হয়ে যায়, রং বদলায় একবার কালো আবার সাদা দাগ পরে।চুলকানি,চামড়ায় আমবাত বার হয়।ত্বক ফোলে যায়, প্রদাহ দেখা দেয়।

হ্রাস-বৃদ্ধি:মুক্ত বাতাসে ভাল থাকে,শুয়ে থাকলে,চাপে,অবিরাম সঞ্চালনে,খোলা বাতাসে আরাম।বসা হতে উঠলে,তাপে বৃদ্ধি,বদ্ধ ঘরে বৃদ্ধি।দিনের শেষেবৃদ্ধি।

শক্তি:সাধারণত ৬ থেকে ৩০ শক্তি বেশি ব্যবহৃত হয়।তবে সকল শক্তিই ব্যবহার করা যায়।উচ্চ রক্তচাপ,পুরাতন মূত্রাশয় প্রদাহ,প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহে, মাথাঘোরা,মাথায় ভারবোধ প্রভৃতি অবস্থায় W. Boericke ৩০ শক্তি প্রয়োগ করতে বলেছেন। বৃদ্ধ বয়সে পুরুষের প্রস্টেট গ্ল্যাণ্ডের অসুখের কারণে মূত্রত্যাগে কষ্ট বা শয্যামূত্র এসব লক্ষণে নিম্নশক্তি 2X বা 3X বিচূর্ণ ভাল কাজ করে।প্রসব কার্যে সহায়তা ও প্রসবের পরবর্তী রক্তস্রাব নিম্নশক্তি ব্যবহার্য-বোরিক।

ডাঃ ইয়াকুব আলী সরকার
ইভা হোমিও হল
বাইপাইল,সাভার,ঢাকা।
রোজি নং ২৩৮৭৬
মোবাইল নংঃ ০১৭১৬৬৫১৪৮৮।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন