শনিবার, ১৭ জুন, ২০১৭

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মূল নীতি


হোমিওপ্যাথির মূল নীতি (principle of Homeopathy)


হোমিওপ্যাথি আজ দ্রুত বর্ধমান চিকিৎসা ব্যবস্থা যা বিশ্বজুড়ে অনুশীলন করা হচ্ছে।হোমিওপ্যাথির শক্তি তার স্পষ্টতা ও প্রভাবশালীতা, রোগীর মানসিক,আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে রোগীর প্রতি সর্বস্বত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন।হোমিওপ্যাথিক কার্যকর ঔষুধসমুহ মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক উপসর্গ বিবেচনা করে রোগীর স্বাতন্ত্রতার উপর নির্ভর করে।হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার নিজস্ব কিছু নীতি বা বৈশিষ্ট রয়েছে,যা অন্যান্ন চিকিৎসা বিদ্যা থেকে পৃথক করেছে।সেই সকল মূল নীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা একটি অনন্য,প্রাকৃতিক,হোলিস্টিক সিস্টেম যা শরীরের রোগ আরোগ্য সহজ সরল উপায়ে সংগঠিত হয়।শরীরে প্রতিক্রিয়া গুলিকে উদ্দীপ্ত করে না এবং কোনও পরিচিত অসংগতি বা সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।হোমিওপ্যাথিক অনুশীলন এবং উৎপাদন ভাল সংজ্ঞায়িত নীতি এবং নির্দেশিকার উপর নির্ভর করে।তিনটি মৌলিক নীতি হোমিওপ্যাথিকে সংজ্ঞায়িত করে এবং ১৮শ শতকের শেষের দিকে এটির সূচনা থেকে অপরিবর্তী রয়েছে।হোমিওপ্যাথির প্রতিষ্ঠাতা,ড.স্যামুয়েল হ্যানিম্যান,এই নীতিগুলি তাঁর গ্রন্থের অর্গানন অব মেডিসিনে উল্লেখ করেছেন।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার তিনটি মৌলিক নীতিঃ
১.প্রথম নীতি-সদৃশ নতিঃ Similia Similibus Curentur/The Law of Similars.সদৃশ ঔষধ দ্বারা সদৃশ রোগ লক্ষণের চিকিৎসা পদ্ধতি।
ডঃ হ্যানিম্যান তার হোমিওপ্যাথিক আবিস্কারের সময় কম্প জ্বর আরোগ্যের জন্য সিনঙ্কোনা বা পেরুভিয়ান বার্কের মতো উৎসের সাথে পরিচিত হন এবং এর ঔষধি পদার্থ ব্যবহার শুরু করে সত্যতা যাচাই করেন।এর মানে হল যে তিনি একটি অসুস্থ ব্যক্তিকে সিঙ্কোনা প্রয়োগ করেন।সিঙ্কোনার একটি পরিচিত রোগ আরোগ্যের ছবি সহ একটি সদৃশ রোগীর উপর পরিচালনা করে ছিলেন।কিন্তু,শুরুতে,তিনি অশোধিত পদার্থ ব্যবহার করে ছিলেন,বা সিঙ্কোনার আরক ব্যবহার করে ছিলেন।তিনি দেখে ছিলেন,রোগী ভাল থাকলেও তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।এই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া গুলিকে কমিয়ে আনতে,আরও পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি শক্তিকরণ ধারণাটি নিয়ে এসেছিলেন।হোমিওপ্যাথিক ঔষুধগুলি শক্তিকৃত এবং ক্রম অনুসারে সন্নিবেশিত।হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সিরিজ ক্রমানুসারে প্রস্তুত করা হয়।প্রতিটি ধাপে ঝাকি দিয়ে,জোরালো আন্দোলন হয়,যতক্ষণ না কোন রাসায়নিক পদার্থ অবশিষ্ট থাকে।শক্তিকৃত সদৃশ ঔষধ রোগ আরোগ্যের আদর্শ ব্যবস্হা হিসেবে হোমিওপ্যাথির অগ্রযাত্রা শুরু হয়।সদৃশ ঔষধ দ্বারা সদৃশ রোগলক্ষণ আরোগ্যের নাম হোমিওপ্যাথি।
.দ্বিতীয় নীতি:ক্ষুদ্রতম মাত্রা(The Principle of Minimum Dose)
ওষুধের শক্তিকরণ পদ্ধতি দ্বারা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অনন্য এক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ও শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে এই জন্য যে, হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ওষুধের মধ্যে ওষুধ বস্তুর বস্তুগত কোনো অবস্থা বিরাজমান থাকে না।অনেকের মনে কিছু অসঙ্গতিপূর্ণ ধারনা হতে পারে যে, ঔষধের পরিমান কমে গেলে উচ্চ শক্তি হয় কিভাবে ?
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হ্রাসের মাধ্যমে উচ্চতর শক্তি প্রস্তুতকৃত।এটি প্রমানিত সত্য হিসেবে ড. হ্যানিম্যান প্রতিষ্ঠা করেন।হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত ঔষধ আরও কার্যকর।ভেষজ হতে মূল আরক বা সর্বনিম্ন ডোজ অর্জন করা হয়,সর্বাধিক পরিাম ঔষধ বা মূল ঔষধ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত নয়,তাই  বিধান অনুযায়ী রোগীর জন্য নির্বাচিত ওষুধ হতে হবে অত্যন্ত সূক্ষ্ণ।কারণ,আমাদের জীবনীশক্তি অতীন্দ্রিয় অশরীরী শক্তি তাকে(Vital force) প্রাণক্রিয়া নামে অভিহিত করা হয়েছে,যা দেখা যায় না,স্পর্শ করা যায় না আকার-আয়তনহীন অথচ তার অস্তিত্ব বিরাজমান।এই শক্তিস্তরে কোনো বস্তু বা জড় পদার্থ পৌঁছানো সম্ভব নয়,ওষুধ বস্তুকে হোমিওপ্যাথিক বিধান অনুযায়ী শক্তিকরণ করা হয় সূক্ষ্ণ থেকে সূক্ষ্ণতর স্তর পর্যন্ত,যতক্ষণ না শক্তি স্তরে না পৌছে।ওষুধ শক্তিকরণের মাধ্যমে জড়ত্বমুক্ত হয়।শক্তিকৃত ওষুধ সিক্ত অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি অনুবটিকা ৪০, ৩০, ২০, ১৫ বা ৮ টেবিল চামচ পানিতে দ্রবীভূত করে তা থেকে এক চামচ ঔষধ রোগীর জন্য একমাত্রা ওষুধ।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার দ্বিতীয় নীতি ন্যূনতম ডোজ।

৩.তৃতীয়নীতি:লক্ষণ সমষ্টিঃ(The Totality of Symptoms) লক্ষণসমষ্টি বলতে সকল লক্ষণের যোগফলও যেমন নয়,তেমনি মেজরিটি অব সিম্পটমও নয়।স্থানীয় ও সাধারণ লক্ষণ বর্জন করে রোগীর মানসিক ও সার্বদৈহিক অসাধারণ,অদ্ভুত,নির্দেশক,বৈশিষ্ট্যময় পরিচায়ক লক্ষণসমুহ এমনভাবে সাজাতে হবে যেন একটি সজিব মানবমূর্তি অংকন করা যায়;তারপর মেটেরিয়া মেডিকা হতে উক্ত সজিব মূর্তির সদৃশতা অনুযায়ী ঔষধ নির্বাচন করতে হবে।উহাই হবে স্পেসিফিক মেডিসিন এবং উহাই যথানিয়মে সুক্ষমাত্রায় প্রয়োগ করা হলে রোগী সত্তর আরোগ্য বা আরোগ্য মুখি হবে।
যদি এমন হয় যে,কিছু লক্ষণের জন্য একটি ঔষধ এবং আর কিছু লক্ষণের জন্য অপর একটি ঔষধ প্রতিযোগিতা করছে;তাহলেও একই সঙ্গে দুইটি ঔষধ নয়,একটির পর আরেকটি বা সকালে একটি বিকালে আরেকটি নয়;এমনকি একদিন একটি অন্যদিন অপরটিও নয়।আবার ১ম টি কিছুদিন ব্যবহারের পর বা ১ম টির ব্যবহার শেষে ২য় টি নয়।যথাসম্ভব অধিকতর সদৃশ একটিই নির্বাচন করতে হবে।নির্বাচিত ১ম টির ক্রিয়া শেষ হলে পরবর্তী আর একটি ঔষধ ব্যবহারের প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে পূর্ব হতে প্রতিযোগী ২য় ঔষধটি নয়।এক্ষেত্রে ১ম ঔষধটি ব্যবহারের পর রোগীর অপসৃত লক্ষণগুলি বাদ দিয়ে ঔষধসৃষ্ট নতুন লক্ষণ ও অবশিষ্ট লক্ষণ একত্রে বিবেচনা করে সদৃশ একটি ঔষধ নির্বাচন করতে হবে;হতে পারে এটি পূর্বের সেই প্রতিযোগী ২য় ঔষধটিই অথবা ভিন্ন আর একটি।
কোন ভাবেই একত্রে,এক সংগে,পরপর বা পর্যায়ক্রমে দুইটি ঔষধ ব্যবহার করা যাবে না।কেননা,একই সাথে একটি মাত্র ঔষধ দিয়ে প্রুভিং সম্পন্ন হয়েছে;একাধিক,মিশ্রণ বা পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করে নয়।সুতরাং সেভাবে ব্যবহার করা হলে রোগীতে তার কী প্রতিক্রিয়া হয় তার প্রুভিং ফল জানা নেই।
এগুলো হোমিও দর্শন"অর্গানন"এর বিধিবদ্ধ কথা,গল্প নয়।
সুতরাং একই সময়ে একটিমাত্র ঔষধ এবং সুক্ষ্মমাত্রায় প্রয়োগে ব্রতী হই। অবশ্যই মেটেরিয়া মেডিকা ও মহাত্মা হ্যানিম্যানের "অর্গানন" ও "ক্রনিক ডিজিজেস" গ্রন্থের অমর নীতিসুত্র অধ্যয়ন ও আত্মস্থ করে যশস্বী হই।
দ্রষ্টব্য : অর্গানন, সুত্র-১৬৯।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার নিজস্ব আরো কিছু সুত্র মেনে চলে,সেগুলো হলোঃ-
4) Law of simplex's
5) Law of dinamizetion
6) Law of drugs proving
7) Theory of vital force
8) Miasma: Classification of diseases
**Acute diseases signed
A) Causation
B) Location
C) Modality
D) Concomitance
**Cronic diseases
A) Time of suffering
B) Causation and suppession
C) Location
D) sensation
E) characters
F) Modalities
G) Concomitance
H) Last treatment
I) Generalities
J) Mind

রোগীর লক্ষণ সাদৃশ্যে নির্বাচিত একটি মাত্র ক্ষুদ্রতম ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।একাধিক লক্ষণের জন্য একাধিক ঔষধ দিয়ে নয়।হ্যানিমেনিয় দর্শণ ছাড়া হোমিওপ্যাথির কোন মূল্য নেই।”অর্গানন” হোক আমাদের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার আদর্শ।


ডাঃ ইয়াকুব আলী সরকার
আশুলিয়া থানার পাশে।
বাইপইল কেন্দ্রীয় মসজিদ রোড,
সাভার,ঢাকা।
গোঃরেজিঃ২৩৮৭৬
মোবাইলঃ০১৭১৬৬৫১৪৮৮।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন