মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০২০

জন্ডিসের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।

Homeopathic treatment of jaundice.

জন্ডিস কি ?

জন্ডিস(Jaundice) ইংরেজি শব্দ। এটি কোন রোগের নাম নয়। এটি রোগের লক্ষন মাত্র।জন্ডিস হলে রক্তে বিলিরুনের পরিমান বৃদ্ধি পায়,ফলে চোখের সাদা অংশ, শৈষ্মিক ঝিল্লি হলৃদ হয়। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়। আমাদের রক্তের লোহিত কণিকাগুলো একটা সময়ে স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙ্গে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে যা পরবর্তীতে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সাথে পিত্তনালীর মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে।অন্ত্র থেকে বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।বিলিরুবিনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যে কোনো অসঙ্গতি দেখা দিলে রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যায় আর দেখা দেয় জন্ডিস।

উপসর্গ

জন্ডিস হলে চোখ হলুদ হয়।তবে হেপাটাইটিস রোগে জন্ডিসের পাশাপাশি ক্ষুদামন্দা, অরুচি,বমি ভাব,জ্বর জ্বর অনুভূতি কিংবা কাঁপানি দিয়ে জ্বর আসা,মৃদু বা তীব্র পেট ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।

ন্ডিসের কারণ

১. লিভার প্রদাহ:
লিভার প্রদাহে বিলিরুবিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জন্ডিস সৃষ্টি হয়।
 ২.পিত্তনালীর প্রদাহ
পিত্তনালীর প্রদাহে বিলিরুবিন শোষণ ব্যাহত হয়।ফলে বিলিরুবিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
 ৩.পিত্তনালীর ব্লক
পিত্তনালীতে ব্লক হলে লিভার বিলিরুবিন সরাতে ব্যর্থ হয়। বেয়ে যায় জন্ডিসের সম্ভাবনা।
৪.গিলবার্ট’স সিন্ড্রোম
এই অবস্থায় এনজাইমের কার্যক্ষমতা কমে যায়।এর ফলে পিত্তের রেচনতন্ত্রে সমস্যা হয় এবং বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়।
 ৫.ডুবিন-জনসন সিন্ড্রোম
এই বংশগত রোগে লিভার থেকে বিলিরুবিন শোষণ হতে বাঁধা দেয়। ফলশ্রুতিতে জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

জন্ডিস থেকে বেঁচে থাকতে আমাদের করণীয় 

১. হেপাটাইটিস-এ ও ই খাদ্য ও পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।আর বি,সি এবং ডি দূষিত রক্ত, সিরিঞ্জ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়।তাই সব সময় বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানি খেতে হবে।শরীরে রক্ত নেয়ার দরকার হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিতে হবে।ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করাটাও খুবই জরুরী।
২.মদ্য পান থেকে বিরত থাকুন।
৩. কল কারখানার রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকুন।
৪. নেশাদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
৫.ব্যবহারকৃত ইনেকশন কিংবা নাক-কান ফোঁড়ানোর সুই ব্যবহার করবেন না।যারা সেলুনে সেভ করেন, তাঁদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আগে ব্যবহার করা ব্লেড বা ক্ষুর আবারো ব্যবহার করা না হয়।
৬. নিরাপদ যৌনমিলন করুন।

জন্ডিসের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধের লক্ষণভিত্তিক আলোচনা

হাইড্রাসটিস(Hydrastis)
চক্ষু,প্রস্রাব,চর্ম হলুদ বর্ণ ধারন করে।মুখে অরুচি।জিহ্বা শ্বেতবর্ণ,বমি ভাব বিদ্যমান সহ নতুন ও পুরাতন জন্ডিস রোগীর জন্য অব্যর্থ

চেলিডোনিয়াম(Chelidonium)
মুখের স্বাদ তিক্ত,জিহ্বা হলুদ বর্ণের ময়লা যুক্ত,চোখ মুখ গায়ের চামড়া হলুদ বর্ণ ধারণ করে।পায়খানা ছাইয়ের মত,মাছে মাঝে গন্ধকের মত হলুদ বর্ণের পায়খানা,ক্ষুধামন্দা,গা বমি বমি,মাঝে মাঝে পিত্ত বমি ইত্যাদি লক্ষণ বিদ্যমান থাকলে চেলিডোনিয়াম উপযোগী।

কার্ডুয়াস মেরি(Cardous Mare)
হলুদ বর্ণের গাঢ়,অল্প প্রস্রাব,চক্ষু হলুদ,মুখে তিক্ত স্বাদ,মাঝে মাঝে বমি,বমি ভাব।কোষ্ঠবদ্ধতা,মল গাটগাট হয়ে নির্গত হয়।লিভারের স্হানে বেদনা।ডানপাশে শুইতে অক্ষমতা ইত্যাদি লক্ষণে কার্ডুয়াস মেরি উপযোগী।

মাইরিকা (Myrica)
চোখ হলুদ বর্ণের,জিহ্বায় হলুদ বর্ণের প্রলেপ,প্রস্রাব হলুদ বা ঘোলা,ঘুম ঘুম ভাব,অক্ষুধা,ঘুমঘুম ভাব,বমি বমি ভাব,মখমন্ডল হলুদ বর্ণের।বিশেষ করে শিশুদের জন্ডিসে মাইরিকা ফলপ্রদ।

ইলাটিরিয়াম(Elaterium)
সদ্যপ্রসূত নবজাত শিশুর পিত্তভেদ,চক্ষু প্রস্রাব হলুদ বর্ণ ইত্যাদি লক্ষণে ইলাটিরিয়াম উপযোগী।বিশেষ করে নবজ্ত শিশুর জন্ডিসে উপযোগী।

নাক্স ভুমিকা(Nux Vom.)
অতিরিক্ত কুইনাইন সেবন জনিত কারণে জন্ডিস হলে নাক্স ভুমিকা উপযোগী।

মার্ক সল
প্রচুর ঘর্ম,লালা স্রাব,রাত্রিকালে বৃদ্ধিশয্যা তাতে বৃদ্ধি,অধিকাংশ ক্ষেত্রেবাম পার্শ ছাড়া শয়নে অক্ষমতা।জিহ্বা ক্লেদাবৃত,মুখে দুর্গন্ধ।রোগীর মল পস্কিার হয় না।নিশ্ফল মলবেগ,সর্বশরীর হরিদ্রাভ।যকৃতে বেদনা বোধ।সর্ব শরীর বিশেষ করে চক্ষু,হাত পায়ের তালু হরিদ্রা বর্ণের হয়।জিহ্বা সরস,মোটা থলথলে দাতের ছাপযুক্ত,মলমূত্র সবই হলুদ এ রোগীর জন্য মার্কসল উপযোগী।

লাইকোপোডিয়াম
কঠিন এবং সাদা মল।মুখে তিক্ত স্বাদ,মলত্যাগে কষ্ট,আহার করার পরেই পেট ফুলিয়া ঢাকের মত হয়।লিভার বেদনা ও বৃদ্ধি।মুত্র কম ও লাল বর্ণের হয়,মলদ্বারে জ্বালা ইত্যাদি লক্ষণে লাইকোপোডিয়াম উপযোগী।

নেট্রাম সাল্ফ
সাইকোসিস দোষযুক্ত পিতামাপতা সন্তানের জন্ডিস হলে নেট্রাম সাল্ফ উপযোগী ঔষধ।রোগী বাম পাশে শয়নে অক্ষমতা,সকালে উদরাময়,মলত্যাগ কালে সশব্দে সামান্য মল ও বায়ু নিঃসরণ আহারের পরে মলত্যাগ বৃদ্ধি,শরীরে পানি জমা,লিভারে বেদনা,হলুদ প্রস্রাব ইত্যাদি লক্ষণে উপযোগী।

জন্ডিসের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় আরো গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ সমুহ

চায়না, পডোফাইলাম, সালফার, ক্রোটেলাস, ডিজিটেলিস, ফসফরাস, বেলেডোনা, কেলিকার্ব, থুজা, এসিড নাই, এলোজ, প্লাম্বাব ,আর্সেনিক এ লবম ইত্যাদি লক্ষন ভেদে প্রয়োজন হয়।

রেপার্টরির সাহায্যে জন্ডিসের একক ঔষধ নির্বাচন

REPERTORYby Oscar E. BOERICKE, M.D.

ABDOMEN

JAUNDICE (icterus)
 -- Acon., Aloe, Am. m., Arg. n., Astacus, Ars., Aur. m. n., Aur., Berb. v.Bry.Card. m., Cascara sag., Ceanoth.Cham.Chel., Chelone, Chionanth., Cholest., Cinch., Corn. c., Crot., Dig., Dolichos, Eup. perf., Hep., Hydr., Iod., Jugl. c., Kali bich., Kali c., Kali Picr., Lach., Lept.Lyc., Merc. c., Merc. d.Merc. s.Myr., Nat. m., Nat. p., Nat. s., Nit. ac., Nux v., Ostrya, Phos., Picr. ac., Plumb., Pod., Ptel., Rumex, Ruta, Sep., Still., Sul., Tarax.Yucca, Veron., Vipera.

জন্ডিস রোগীর জন্য খাদ্য ও পথ্য

জন্ডিসের চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সঠিক খাদ্য তালিকা অনুসরণ করা।জন্ডিস রোগীদের ফ্যাটযুক্ত খাবার বর্জনই যথেষ্ট নয়,পাশাপাশি দরকার সঠিক খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করা।

জন্ডিস রোগীদের খাদ্য তালিকা

v ১.টমেটো ভিটামিন `সি`র অন্যতম উৎস। টমেটোতে রয়েছে লাইকোপিন, যা এন্টি অক্সিডেন্ট। তাই টমেটোর জুস লিভারের কোষকে তেজোদীপ্ত করে।
v ২.আমলকী ভিটামিন সির গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস। আমলকী কাঁচা, শুকিয়ে অথবা জুস করে খেলে তা লিভারের কোষের জন্য খুবই উপকারী। এটি লিভারকে পরিশোধন করতে সহায়ক।
v ৩.পুদিনা পাতা লিভার ফাংশনের জন্য খুবই উপকারী।প্রতিদিন সকালে চার-পাঁচটি পুদিনা পাতা খেলে জন্ডিসের জন্য ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
v ৪. লেবুর রস পাকস্থলীর জন্য সহায়ক।প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পানি মিশিয়ে লেবুর রস খেলে আপনার পরিপাকতন্ত্র ভালো কাজ করবে।
v ৫. লিভার পরিশোধনে আনারস খুবই উপকারী। জন্ডিস থেকে আরোগ্য লাভের জন্য আনারস খুবই কার্যকর একটি ফল।
v ৬. আখের শরবতও জন্ডিসের জন্য উপকারী।
v ৭. পেঁপে, কলা, আপেল,মাল্টা, জন্ডিসের পথ্য হিসেবে কাজ করে।

ডা. ইয়াকুব আলী সরকার
ইভা হোমিও হল
মোবাইল নং ০১৭১৬৬৫১৪৮৮

৩টি মন্তব্য: