রবিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৮

নভেল করোনা ভাইরাস(COVID-19) মোকাবেলায় হোমিওপ্যাথি



নভেল করোনা ভাইরাস(COVID-19) মোকাবেলায় হোমিওপ্যাথি

জাতীয় পত্রিকায় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় হোমিওপ্যাথদের নির্দেশনা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের “বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড” কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। এটা হোমিওপ্যাথদের জন্য যেমন খুশির সংবাদ তেমন দায়বদ্ধতারও বটে। পূর্বের অনেক মহামারি রোগে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার অবদান ছিল গর্ব করার মতো। সেখানে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার চেয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার রোগি মৃত্যুহার ছিল তুলনামূলক কম। যার ফলে অনেক চিকিৎসক হোমিওপ্যাথিতে চলে আসে। হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল গুলোতে রোগি ভর্তি থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেছে। কালের পরিক্রমায় সে ইতিহাস এখন ফিকে হয়ে এসেছে। ক্রমান্বয়ে হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল গুলো বন্ধ করা হয়েছে। রোগ ভিত্তিক প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোন মহামারির আক্রমণ রোধে সাফল্য দেখাতে পারেনি। এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসায় ও রোগি ব্যবস্থাপনার দিকে। লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসায় মহামারি রোধে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার বিকল্প নেই। কারণ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থাতে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসাই এর পূর্বশর্ত।

লক্ষণভিত্তিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় বর্তমান সময়ের মহামারি করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট জটিলতা মোকাবেলায় কাজ করলেও রোগ নির্ণয়ের অভাবে নভেল করোনা ভাইরাস(COVID-19) সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশে জটিলতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা আছে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায়। কারণ আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার অপর্যাপ্ততা ও হোমিওপ্যাথদের রোগ নির্ণয়ে জ্ঞানের স্বল্পতায় রোগি চিকিৎসার পরবর্তি তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন সম্ভব হবে না। যার ফলে ভয়াবহ করোনা ভাইরাসে হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতা প্রমানে জটিলতা দেখা দেয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া করোনা ভাইরাসের রোগি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা চলাকালীন সময়কার সৃষ্ট জটিলতা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত দক্ষতা সম্পন্ন হোমিওপ্যাথ আজও তৈরি হয়নি। অত্যন্ত জটিল অবস্থায় যখন রোগির জন্য ভেন্টিলেশানসহ সিসিইউ, আইসিইউ প্রয়োজন পড়বে সেক্ষেত্রে সমন্বিত চিকিৎসার সাহায্য ছাড়া একক ভাবে হোমিওপ্যাথ কোন ক্রমেই মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন না। এটা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের দুর্বলতা। এই দুর্বলতা একদিনে তৈরি হয়নি আবার একদিনে দক্ষতা অর্জন করাও সম্ভব নয়। ক্রমান্বয়ে অত্যন্ত সুচারুভাবে হোমিওপ্যাথি থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের টেকনিক্যাল জ্ঞান থেকে বঞ্চিত করে হোমিওপ্যাথিকে দুর্বল করা হচ্ছে। কিছু ভাববাদি হোমিওপ্যাথও এর দায়বদ্ধতা থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে পারবেন না। মহামারি ছাড়াও যেকোন রোগের তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও জটিল রোগি ব্যবস্থাপনার জন্য রোগ নির্ণয় জরুরী হলেও কিছু উগ্রপন্থী হোমিওপ্যাথ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে মেডিক্যাল টেকনোলজির ব্যবহার কমিয়ে এনে হোমিওপ্যাথিকে হাসপাতাল কেন্দ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে সরিয়ে চেম্বার কেন্দ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিনত করেছে। যার দায়ভার এসে পড়েছে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর। একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল।

আজকের এই ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের মহামারি রোধে প্রয়োজন ছিল পর্যাপ্ত মেডিক্যাল ব্যবস্থাপনাসহ হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল ও দক্ষ টেকনোলজিক্যাল জ্ঞান সম্পন্ন হোমিওপ্যাথ। বাংলাদেশের প্রায় বিশ কোটি মানুষের জন্য একমাত্র সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চলছে অপর্যাপ্ত মেডিক্যাল ব্যবস্থাপনায়। বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ গুলোতে আউটডোর চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও নেই ইনডোর চিকিৎসা ব্যবস্থা। শুধুমাত্র আউটডোর সেবা দিয়েই কি একটি চিকিৎসা ব্যবস্থার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? শুধুমাত্র লক্ষণসাদৃশ্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচনের মাধ্যমেই চিকিৎসক হিসাবে দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? হোমিওপ্যাথগণ কোন ক্রমেই এই দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যেতে পারেননা। মানব কল্যাণের জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষ্কার করেছেন মহত্মা হ্যানিম্যান। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষতা সম্পন্ন হোমিওপ্যাথের প্রয়োজন ছিলো। অথচ বর্তমান সময়ের এই ভয়াবহ দূর্যোগ মুহূর্তে শুধু দক্ষতা ও টেকনোলজি ব্যবহারের অপরাগতায় হোমিওপ্যাথিকে তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছেনা। পূর্বের ন্যায় মহামারি প্রাদূর্ভাবে পরিসংখ্যানের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কার্যকারিতা দেখাতে পারলে হোমিওপ্যাথির দৈন্যদশা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতো বলে মনে করছি।


লেখক-
ডাঃ মোহাম্মদ ইখতিয়ার উদ্দিন
BHMS, MS(Microbiology), MPH(Epidemiology),
DMU(Bimdur), PGD(Homeopathic medicine).

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন