সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০২০

ডায়াবেটিসের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা


হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ডায়াবেটিসের আরোগ্য বিধান।

ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস একটি বিপাকজনিত রোগ। আমাদের শরীরে ইনস্যুলিন নামের হরমোনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় তা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এই সামগ্রিক অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে। এই রোগে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দীর্ঘস্থায়ীভাবে বেড়ে যায়।সুস্থ লোকের রক্তে প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৫.৬ মিলি মোলের কম এবং খাবার দুই ঘণ্টা পরে ৭.৮ মিলি মোলের কম থাকে। অভুক্ত অবস্থায় রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ ৭.১ মিলি মোলের বেশি হলে অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ ১১.১ মিলি মোলের বেশি হলে ডায়াবেটিস হয়েছে বলে গণ্য করা হয়।

ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স কি? 
ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয়।কিন্তু যা সঠিকভাবে কাজ করে না অর্থাৎ শরীরে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা সঠিকভাবে কমাতে পারে না।কোনো ব্যক্তির শরীরে ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স হলে পরবর্তীতে তার ডায়াবেটিস দেখা দেয়, সাধারণত টাইপ-২ ডায়াবেটিস।
ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স হলে সাধারণত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়,  তন্ত্রাচ্ছন্ন ভাব থাকে। মস্তিষ্কস্থূলতা দেখা দেয়, ওজন বাড়ে।শরীরে চর্বি জমে, রক্তচাপ বাড়ে, ক্ষুধা ও তৃষ্ণা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়।


ডায়াবেটিসের কারণ, লক্ষণ ও জটিলতা 
কার্বোহাইড্রেটের বিপাকক্রিয়ার গোলযোগের কারনে ডায়াবেটিস হয়। দেহে ইনসুলিনের অভাব ঘটে। ইনসুলিনের অভাবে রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে যায়। গ্লুকোজের ওসমোটিক ক্রিয়ার ফলে পলি ইউরিয়া জন্মায়।  এর ফলে শরীরের শক্তি ও পুষ্টির অভাব হয়। রোগীর শরীরে চুলকানী,ঘন ঘন প্রস্রাব হয় জ্বালাপোড়া করে, যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া, মাংশপেশীর সংকোচন শক্তির ঘাটতি হয়, চামড়া শুস্ক, খসখসে হয়, হজমে গোলযোগ দেখা যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, লিভারের রোগ, দৃষ্টি শক্তির অভাব হয়,রক্তচাপ বাড়ে, যৌন দুর্বলতা তথা ধ্বজভংগ রোগ হয়, মাথার চুল পড়া, কিডনীরোগ হয় মোট কথা শরীরের সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারায়।

সংক্ষেপে ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহ
  • ক. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
  • খ. খুব বেশি পিপাসা লাগা
  • গ. বেশি ক্ষুধা পাওয়া
  • ঘ. যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া
  • ঙ. ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা
  • চ. ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হওয়া
  • ছ. খোস-পাঁচড়া, ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেওয়া
  • জ. চোখে কম দেখা।
ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয়ের উপায়
রক্তের গ্লুকোজের মাত্রার পরিমাপ করে ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে হয়। সুস্থ ব্যক্তির রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৬.১ মিলি মোলের কম এবং খাবার ২ ঘণ্টা পরে ৭.৮ মিলি মোলের কম অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ ১১.১ মিলিমোলের কম থাকে। কোনো ব্যক্তির রক্তের প্লাজমায় অভুক্ত অবস্থায় গ্লুকোজের পরিমাণ ৭.০ মিলি মোল বা তার বেশি হলে এবং খাবার খাওয়ার অথবা ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে রক্তের প্লাজমায় গ্লুকোজের পরিমাণ ১১.১ মিলি মোল বা তার বেশি হলে, তাকে ডায়াবেটিস রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।


ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ ও তাদের পার্থক্যসমূহ
১.টাইপ-১, ২.টাইপ-২, ৩. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। ৪.অন্যান্য নির্দিষ্ট কারণ ভিত্তিক শ্রেণী।
টাইপ-১
এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না। সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সে এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য এসব রোগীকে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতেই হয়। অন্যথায় রক্তের শর্করা অতি দ্রুত বেড়ে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই রক্তে অম্লজাতীয় বিষক্রিয়ায় অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

টাইপ-২
এই শ্রেণীর রোগীর বয়স অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ত্রিশ বছরের ওপরে হয়ে থাকে।আজকাল ত্রিশ বছরের নিচেও এ ধরনের রোগীর সংখ্যা দেখা দিচ্ছে ও দিনে দিনে বেড়ে চলছে। এদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয়। তবে,প্রয়োজনে ইনসুলিন ইনজেকশন না দিলে টাইপ-১ রোগীর মতো এদের বিষক্রিয়া হয় না। অর্থাৎ এরা ইনসুলিন নির্ভরশীল নয়। অনেক ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যায়ামের সাহায্যে এদের চিকিৎসা করা সম্ভব। এখন বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগটি মানবদেহে দ্রুত বাড়ছে। লাখো মানুষ শর্করার মাত্রার বাড়ার কারণে এ রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের যে কয়টি উপায় রয়েছে তা হলো: ব্যায়াম, খাদ্য নিয়ন্ত্রন, স্বাস্হবিধি পালন, সঠিকখাদ্য তালিকা, ধ্যান ইত্যাদি।
খাদ্য
নিচের খাদ্যগুলি আপনার খাদ্যতালিকায় রাখলে আপনার ডায়াবেটিস সহজেই নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
নয়নতারা ফুল 

নয়নতারা খুব পরিচিত একটি ফুল। এ ফুলগাছের সব অংশই তেতো। প্রতিদিন সকালে দু’টি পাতা খালি পেটে চিবিয়ে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে।
তেতো করলা 

তেতো করলা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
মেথি 

মেথি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বীজ। মেথি দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি হজমে খুব সহায়ক। মেথি গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিরাতে রাতে দুই টেবিল চামচ মেথি পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পানি আলাদা করে খালি পেটে এই পানি পান করুন। এতে ডায়াবেটিসহ বিভিন্ন রোগের উপকার পাবেন।

নিম-তুলসি 
তুলসি অ্যান্টি -অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং নিম পাতার রয়েছে ওষুধি বৈশিষ্ট্য।নিমপাতা ও তুলসি পাতা ডায়াবেটিস নিরাময়ে ভালো কাজে দেবে। পাঁচটি পুদিনা পাতা ও নিমপাতা পানিতে ধুয়ে খালি পেটে চিবিয়ে খেলে ভালো উপকার পাবেন।
কালো জাম 

কালো জাম গ্রীষ্মকালীন ফল। এটি রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবচেয়ে ভালো ফল হিসেবে অন্যতম।
ঢেঁড়স 

ঢেঁড়স ফাইবারসমৃদ্ধ সবজি।সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস নিরাময় করতে রাতে এক গ্লাস পানির মধ্যে একটি ঢেঁড়স কেটে ভিজিয়ে রাখুন।সকালে গ্লাস থেকে ঢেঁড়স তুলে খালি পেটে এই পানি পান করুন।
মিষ্টি কুমড়া  

মিষ্টি কুমড়া অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি। ডায়াবেটিক রোগীরা এ সবজি খেলে তাদের ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে থাকবে । তাছাড়া মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। ফলে চোখের সমস্যা দূর করে ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
হাটা
 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তে শর্করা প্রতিরোধ করতে সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিকার অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা। প্রথমে ধীরে ধীরে পরে জোরে হাঁটার অভ্যাস করুন। এতে ক্যালোরি ও অতিরিক্ত চর্বি বার্ন করতেও সাহায্য করবে।


হোমিওপ্যাথিক মতে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা
বোরিক( Boericke) এর মতে নিচের ঔষধসমুহ Blood Sugar – এর পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে ও প্রস্রাবের শর্করা বার হওয়া রোধ করে ।

* এসেটিক অ্যাসিড ( Acetic Acid ) ,*অ্যাসিড কার্বলিক ( Acid Carbolicum ) ,* আর্জেন্ট মেটালিকাম ( Argent Met ) ,* আর্সেনিক ( Arsenic Album ) ,* বোভিষ্টা ( Bovista ) ,* ক্যানাবিস ইন্ডিকা ( Cannabis Indica ) ,* কষ্টিকাম ( Causticum ) ,* কলোসিন্থ ( Colocynth ) ,* অ্যাসিড ফস্ফরিকাম ( Acid Phos ) ,* এমন - এসেটিকাম ( Ammon Aceticum ) ,* ইউরেনিয়ম নাইট্রিকাম(Uranium Nitricum)* সিজিজিয়াম ( Syzygium Jambolinum ) ,* আর্সেনিক - ব্রোমাইড ( Arsenic Bromide) ,* অ্যাসিড ল্যাকটিক (Acid Lacticum) ,* ক্যালি নাইট্রিকাম (Kali Nitricum) ,* হেলোনিয়াস (Helonias Dioica) ,* রাস – এরোম্যাটিক ( Rhus Aromatica ) ,* ক্রিয়োজোট ( Kreosotum ) ,* মস্কাস ( Moschus ) ,* ন্যাট্রাম- সালফ ( Natrum Sulphuricum )।
ডাঃ এলেন এর মতে ইনসুলিন ৩০ শক্তির ঔষধ দিনে তিন বার প্রয়োগে ডায়াবেটিস নিরাময়ে সহায়ক।
লক্ষণ সাদৃশ্যে চিকিৎসা হইল আমাদের প্রধান হাতিয়ার তাই লক্ষণ সাদৃশ্য হইলে মেটিরিয়া মেডিকার সকল ঔষধই প্রয়োজন হইতে পারে। তবে জটিল রোগীর, রোগের চিকিৎসায় মায়াজমের দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে চিকিৎসা শুরু করিলে খুব সহজেই সফল হওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।


ডায়াবেটিসের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ সমুহের লক্ষণ ভিত্তিক আলোচনা 

এসেটিক এসিড

অত্যধিক শর্করাযুক্ত প্রচুর পরিমানে পানির মত প্রস্রাব।দুর্বলতা, শীর্ণতা, রক্তহীনতা, পান্ডুবর্ণ ও গুরুতরপানি পিপাসা ইত্যাদি লক্ষণে এসেটিক এসিড বহুমুত্র বা ডায়াবেটিস নিরাময় করিতে পারে। বহুমুত্র রোগীর জলউদরী, বুকে পানি জমা,পচনশীল ক্ষত ইত্যাদি উপসর্গও নিরাময়ে এসেটিক এসিড উপযোগী।
আর্জেন্ট মেট

প্রচুর পরিমানে মিষ্ট গন্ধযুক্ত ঘোলা বা ঘোলাটে প্রস্রাব কারী ডায়াবেটিস রোগীর রাতে ঘনঘন প্রস্রাবের জন্র নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটিলে,অত্যন্ত ক্লান্ত বোধ হলে,দেহের অত্যন্ত শীর্ণতা সহহলুদ বর্ণের প্রস্রাব, মুখে দুর্গন্ধ। অন্ডকোষ,পায়ে শোধ বা স্ফিতি,চুলকানী ও পচনশীল ক্ষত ইত্যাদি লক্ষণে আর্জেন্ট মেট উপযোঘী।
আর্নিকা

কোন প্রকার আঘাত পাইয়া বারবার গায়ে ফোড়া হওয়ার হলুদ বর্ণের প্রস্রাবকারী ডায়াবেটিসের জন্য আর্নিকা মন্টেনা উপযোগী।রোগীর মুখ সবসময় শুকাইয়া থাকে এবংঘনঘন পিপাসা লাগে ওেসই রোগীর এই ঔষধ জরুরী প্রয়োজন।
আর্সেনিক এলবম

রোগীর অস্হিরতা মৃত্যুভয়,ঘনঘন পানি পিপাসা,ইত্যাদি লক্ষণযুক্ত ডায়াবেটিস রোগীর দৈহিক, মঅলীরিক ও মানসিক দুর্বলতা, মৃত্যুভয় থাকে,সামান্য নড়াচড়ায় শ্বাসটান বাড়ে পাতলা পায়খানা ও হলুদ বা সবুজ বা ঘোলা প্রস্রাব হয়, রোগীর সামান্যতেই মুর্ছার ভাব হয় তার জন্য আর্সেনিক এলবম উপযোগী।
বোভিষ্টা

বারবার প্রস্রাবের বেগ, প্রস্রাবের পরেই ফোটাফোটাফোটা প্রস্রাব হয়, উজ্জল লাল বর্ণের মুত্র হয় কিছুক্ষণ পরেই ঘোলা হয়ে যায় সর্বশরীরের ক্লান্তি বিষেশত সন্ধিগুলির দুর্বলতা। সামান্য শ্রমেই হৃৎপিন্ডের দৃশ্যমান কম্পন; কীটবেদনা; অবনত বৃদ্ধি; পিত্তচাকা উত্যাদি লক্ষণে বোভিষ্টা উপযোগী।
ক্যাল্কেরিয়া কার্ব 

পুন: পুন: গন্ধহীন অথবা অল্প বা উগ্র গন্ধ-বিশিষ্ট প্রচুর প্রস্রাব; মুত্রত্যাগের পর বিন্দু ‍বিন্দু মুত্রপাত; শয্যামুত্র; প্রচন্ড ক্ষুধা এবং প্রবল পিপাসা; শীতল জলপানেচ্ছা; ডিম্ব, লবনাক্ত ও মিষ্ট দ্রব্যাদি ও সুরা পানে আসক্তি; সর্দি প্রবণতা, শীতল ও জলীয় বায়ু অসহনীয়তা ইত্যাদি লক্ষণে ক্যালকেরিয়া কার্ব উপযোগী।
ক্যাল্কেরিয়া ফস

দুঃখদুর্দশা, প্রেমনৈরাশ্যজনিত শোকবশত বহুমুত্রসহ অত্যধিক দুর্বলতা; অপরাহ্নে মুখশুষ্কতাসহ পিপাসাধিক্য। সশর্করা বহুমুত্র রোগে ফুসফুস আক্রান্ত হইলে ইহা প্রভূত উপকার সাধনে সক্ষম। পদের শীতলতা ও প্রভূত ঘর্মসহ যক্ষারোগীদের বহুকাল স্থায়ী কাশি সহ বহুমূত্র; বহুল পরিমাণে মুত্রস্রাবের পর খালি মুত্রাধারে যন্ত্রনা ও অত্যধিক দুর্বলতাবোধ; লবনাক্ত দ্রব্যাদির আকাঙ্ক্ষা; লোল চর্ম ও শীর্ণতা। এই লক্ষন সমষ্টি ক্যালকেরিয়া ফস উপযোগী।
ক্যানাবিস ইন্ডিকা 

অনেক পরিমানে প্রস্রাব,প্রস্রাব করার আগে অনেক সময় বসিয়া থাকতে হয়।মুত্রের শেষ বিন্দু হাত দ্বারা ঝাকি দিয়ে ফেলতে হয়। মুত্রের ধারা থামিয়া থামিয়া হয়। মুখের চামড়া টান টান অনুভব হয়। মুখে ও গলার মাঝে শুষ্কতা অনুভব হয়। কিন্তু জলপানে অনিচ্ছুক। শোবার পরেই বোবায় ধরে। মুখে ফেনা যুক্ত ঘন চটচটে লালা বের হয়।
ফসফরাস

টিউবারকুলিনিক রোগী, লম্বা, নার্ভাস বা দুর্বল চিত্তের, প্রচন্ড বিষণ্ন এবং স্ট্রেসড। ডায়াবেটিক রোগীর কিডনী আর লিভারের জন্য এই ঔষধ কার্যকর।
সিজিজিয়াম 
জাম্বো
শর্করাযুক্ত মূত্র অধিক পরিমাণে ও বার বার হয়। প্রবল তৃষ্ণা, দুর্বলতা বোধ।শরীর ক্রমশ কৃশ হয়। ডায়াবেটিসের একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইউরেনিয়াম নাইট্রিকাম
ক্ষুধা তৃষ্ণার মাত্রা বেড়ে যায়। প্রচুর পরিমাণে খাওয়া সত্ত্বেও শরীর ক্রমশ কৃশ ও দুর্বল হতে থাকে। পেট ফাঁপে।মতা, কখনো অসাড়ে প্রস্রাব হয়। প্রস্রাবের পরেই পিপাসা। মুখ শুকিয়ে আসে। ক্রমশ দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, অনিদ্রা, কোষ্ঠবদ্ধতা,খিটখটে মেজাজ-এসবের প্রকোপও দেখা যায়।
অ্যাব্রোমা আগস্টা
এই ঔষধের মূল লক্ষণ হলো শর্করাযুক্ত বহুমূত্র, অধিক পরিমাণে ও বার বার প্রস্রাব। প্রস্রাব কখনো ঘোলা আবার কখনো স্বচ্ছ, আঁশটে গন্ধ, মূত্র ধারণে অক্ষমতায় উপযুক্ত ঔষধ।
ল্যাকট্রিক অ্যাসিড
শর্করাযুক্ত প্রস্রাব, অধিক পরিমাণে ও ঘন ঘন হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য। পায়ে দুর্গন্ধবিহীন ঘাম হয়।
ক্রিয়োজোট

শর্করাযুক্ত প্রস্রাব খুব ঘন ঘন অধিক পরিমাণে হয়। রাতে বৃদ্ধি,প্রস্রাবের বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
এসিড ফস

স্নায়বিক দুর্বলতা, প্রবল পিপাসা, শরীর ক্রমশ কৃশ ও দুর্বল হয়। ঘন ও সাদা প্রস্রাবের ক্ষেত্রে এসিড ফস খুবই উপকারী।
হিলোনিয়াস 
ডায়ো
শর্করাহীন স্বচ্ছ পানির মত প্রচুর প্রস্রাব, ঘুম ঘুম ভাব, বৃক্ক প্রদেশে ব্যথা।
অ্যানাথিরাম
পিপাসা ও দুর্বলতাসহ অধিক পরিমাণে প্রস্রাব, সবসময় মনে হয় প্রস্রাব হবে।
বোরিকের রেপার্টরির সাহায্যে ডায়াবেটিসের একক সদৃশ ঔষধ নির্বাচন দেখানো হল
DIABETES, Sugar -- Acet. ac.Adren., Am. acet., Arg. m., Arg. n., Aristol., Arn., Ars. br., Ars. iod., Ars., Asclep. vinc., Aur., Aur. mur., Bell., Bor. ac., Bov., Bry., Caps., Carb. ac., Ceanoth., Cham., Chel., Chimaph.Chionanth.Coca.Cod., Colch., Crot., Cupr. ars., Cur., Eup. purp., Fel tauri, Ferr. iod., Ferr. mur., Fluor. ac., Glon., Glycerin, Grind., Helleb.Helon., Iod., Iris, Kali acet., Kali br., Kreos., Lach., Lact. ac., Lecith., Lycop., Lyc., Lyssin, Morph., Mosch., Murex, Nat. m., Nat. s., Nit. ac., Nux v., Op.Pancreat., Phaseol., Phos. ac.Phos., Phlorid., Picr. ac., Plumb. iod., Plumb., Pod., Rhus ar., Scilla, Sec., Sil.Sizyg., Strych. ars., Sul., Tar. h., Tarax., Tereb., Uran. n., Urea, Vanad.
Assimilative disorders -- Uran n.
Gastrohepatic origin -- Ars. iod., Ars., Bry., Calc. c., Cham., Chel., Kreos., Lact. ac., Lept., Lyc., Nux v.Uran n.Nervous origin -- Ars., Aur. mur., Calc. c., Ign.Phos. ac., Strych. ars.
Pancreatic origin -- Iris., Pancreat., Phos.
Concomitant
Debility [with] -- Acet. ac., Op.
Gangrene,boils,carbuncles,diarrhœa [with] -- Ars.
Gouty symptoms [with] -- Lact. ac.Nat. s.Impotency [with] -- Coca, Mosch.
Melancholia,emaciation,thirst,restlessness [with] -- Helon.
Motor paralysis [with] -- Cur.
Rapid course [with] -- Cur., Morph.
Ulceration [with] -- Sizyg.
DIABETES INSIPIDUS Copious, profuse; polyuria;
diuresis (See Diabetes.) -- Acet. ac., Acon., Alfal, Am. acet., Apoc., Arg. m., Arg. mur., Aur. mur., Ars., Bell., Bry., Cahinca, Can. ind., Caust., Cepa, Chin. s., Chionanth., Cina, Cod., Conv., Dulc., Equis.Eup. purp.Ferr. mur., Ferr. n., Gels., Glycerin, Glon., Gnaph., Guaco, Helleb.Helon.,Ign., Indol, Kali c., Kali iod., Kali n.Kreos., Lact. ac., Led., Lil. t.Lith. c.Lyc., Mag. p., Merc. c., Mosch., MurexNat. m., Niccol. s., Nit. ac., Nux. v., Ol. an.Oxytr.Phos. ac., Phos., Physal., Picr. ac., Plat. m. n., Puls., Quass., Rhus ar.Samb., Sang., Santon., Sars., ScillaSinap. n., Spart., Staph., Stroph.Sul., Tarax., Tereb., Thymol, Thyr., Uran., Verbasc., Verv. v.
Copious at night -- Ambra, Kali iod., Lyc.Murex, Petrol., Phos. ac., Quass., Scilla.
হোমিওপ্যাথিক একটি লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা।রোগের নামে কোন চিকিৎসা করা হয় না রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। রোগ আরোগ্যের ক্ষেত্রে মেটেরিয়া মেটিকায় লেখা যে কোন ঔষধ এই রোগ চিকিৎসায় ব্যবহার হতে পারে।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় বাইয়োকেমি ঔষধসমুহ:

ক্যালকেরিয়া ফস
রোগী ঘনঘন প্রস্রাব,পরিমানে বেশী প্রস্রাব,হাড় ও পেশীতে বেদনা, সমস্ত শরীর ঠান্ডা ভাব থাকে । উক্ত লক্ষণ সমষ্টি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তার জন্য প্রয়োগ করলে স্বাভাবিক জীবন সম্ভব । মাত্রা:6x,12x,শক্তির ঔষধ বড়দের চার বড়ি, ছোটদের দুই বড়ি দিনে খাওয়ার পরে চার বার গরম পানিতে খাইতে হবে।
ফেরমফস
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান কম,শেরীরের যে কোন অংশের রক্তক্ষরণ, বার বার প্রস্রাবের বেগ, মুত্রথলিতে বেদনা, শরীর দুর্বলতা লক্ষনগুলি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তাকে এই ঔষধটি দিবেন রোগ লক্ষণ দুর হবে। মাত্রা: 6x, 12x,শক্তির ঔষধ বড়দের চার বড়ি,ছোটদের দুই বড়ি দিনে খাওয়ার পরে চার বার গরম পানিতে খাইতে হবে।
কেলিফস
রোগী অত্যন্ত স্নায়ুবিক দুর্বল, কাজে কর্মে উৎসাহহীনতা, মনমরা ভাব, ক্লান্তিবোধ, অসারে মুত্রত্যাগ, পিঠে বেদনা, হাত পা অবস, পক্ষাঘাত গ্রস্হ যৌন দুর্বলতা লক্ষনগুলি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তাকে এই ঔষধটি দিবেন রোগ লক্ষণ দুর হবে । রোগী সুস্হ্যতা বোধ করবে। মাত্রা: 6x, 12x,শক্তির ঔষধ বড়দের চার বড়ি,ছোটদের দুই বড়ি দিনে খাওয়ার পরে চার বার গরম পানিতে খাইতে হবে ।
নেট্রাম ফস
যে রোগীর প্রস্রাবে ল্যাকটিক এসিডের পরিমান বৃদ্ধি পায়, শর্করার পরিমান বৃদ্ধি পায়, টক উদগার উঠে, হাটু হাত পার গাউট বেদনা হয়, সেইসকল রোগীর সুগারের পরিমান কমাইতে জরুরী প্রয়োজন। উপরে উল্লেখিত লক্ষনগুলি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তাকে এই ঔষধটি দিবেন রোগ  লক্ষণ দুর হবে রোগী সুস্হ্যতাবোধ করবে। মাত্রঃ 6x, 12x, শক্তির ঔষধ বড়দের চার বড়ি, ছোটদের দুই বড়ি দিনে খাওয়ার পরে চার বার গরম পানিতে খাইতেহবে।
নেট্রাম সালফ
লিভারদোষযুক্ত, ঘনঘন মুত্রত্যাগ, কিডনীর রোগী,প্যানক্রিয়াসের সমস্যাসহ, মুত্রে প্রচুর সুগার নিঃস্বরণ , উল্লেখিত লক্ষনগুলি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তাকে এই ঔষধটি দিবেন রোগ লক্ষণ দুর হবে রোগী সুস্হ্যতাবোধ করবে।মাত্রাঃ 6x, 12x,শক্তির ঔষধ বড়দের চার বড়ি, ছোটদের দুই বড়ি দিনে খাওয়ার পরে চার বার গরম পানিতে খাইতে হবে।
কেলি মিউর 
জিহ্বাহ সাদা কোষ্ঠবদ্ধ, উল্লেখিত লক্ষনগুলি যে রোগীর মাঝে পাওয়া যাবে তাকে এই ঔষধটি দিবেন রোগ লক্ষণ দুর হবে রোগী সুস্হ্যতা বোধ করবে।মাত্রাঃ 6x, 12x, শক্তির ঔষধ বড়দের চারবড়ি, ছোটদের দুই বড়ি দিনে খাওয়ার পরে চার বার গরম পানিতে খাইতে হবে।
কম্বিনেশন সাত
বাইয়োকেমিক কম্বিনেশন সাত(৭) নং সাধারনত: সকল ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রেই দেওয়া যায়।

উপসংহার
অর্গানন অব মেডিসিন অনুসারে রোগীর সকর লক্ষণ সমষ্টি বিবেচনায় কি ঔষধ দেয়া প্রয়োজন সেই বিষয়টি দক্ষ ডাক্তার জানেন। আমার লেখা নতুন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারগনের উপযোগী করে লেখা। কেউ যদি লেখা পড়ে পড়ে ডাক্তারী শুরু করেন তবে ভুল করবেন। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা একটি জটিল ঔষধ নির্বাচন পদ্ধতি। আপনারা কখনও একা একা ঔষধ কিনে ডাক্তারী করবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

ডা: ইয়াকুব আলী সরকার
ইভা হোমিও হল
বাইপাইল, সাভার, ঢাকা।
গভঃ রেজি নং ২৩৮৭৬।
মোবাইল নং ০১৭১৬৬৫১৪৮৮

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন