বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০

মানসিক সমস্যা উন্মাদের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।

Mental Disorder Crazy's Homeopathic Treatment

মানসিক ব্যাধি (Mental illness) 

মন এবং আচরণকে প্রভাবিত করে এমন যে কোন ধরনের জটিলতা। বস্ত্তত মানসিক রোগ ব্যক্তির আচরণের সাথে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রকৃতিগতভাবে আত্মপরাজয়মূলক (self-defeating) এবং অসংলগ্ন। এই আচরণ প্রতিটি ব্যক্তি এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এই রোগে কয়েক ধরনের বিপর্যস্ত অবস্থার উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশ পায়। এছাড়া এই উপসর্গগুলি মানসিক বা শারীরিক লক্ষণ অথবা উভয় প্রকারেই প্রকাশ পেতে পারে।

মনোবিকার (psychosis)  অন্যতম প্রধান এই মানসিক রোগে চিন্তাশক্তি, অনুভূতি এবং আচরণের সুস্পষ্ট অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের অসুস্থতা একজন ব্যক্তিকে সমাজে কাজ করার অনুপোযোগী করে তোলে। মনোবিকারগ্রস্ত রোগীর ক্ষেত্রে অন্তর্দৃষ্টি কাজ করে না এবং বাস্তব সমস্যা উপলব্ধি করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এ ধরনের রোগীদের মধ্যে চিন্তাশক্তির অস্বাভাবিকতা ভ্রান্তির সৃষ্টি করে। অর্থাৎ ভ্রান্ত ধারণাগুলি সাধারণত অনুভূতি অথবা অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ভুল পথে প্রয়োগ করা হয়। এসব রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কোন উপযুক্ত বাহ্যিক উদ্দীপনার অনুপস্থিতির কারণে সৃষ্ট একটি চেতনাবাহী অনুভূতি বা মতিভ্রম (hallucination) ঘটতে পারে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ বিশ্বাস করে যে, মনোবিকার কোন অতি প্রাকৃত শক্তি অথবা ভৌতিক শক্তির দ্বারা সৃষ্ট এবং এ জাতীয় জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রায়শই পাগল অথবা উন্মাদ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

জোফ্রেনিয়া  (Schizophrenia)  উদ্ভট চিন্তা, ভগ্নমনস্কতা, সামঞ্জস্যহীন আচরণ এবং আবেগ প্রবণতা ও বু্দ্ধিমত্তার অবনতি, এমন উপসর্গ প্রদর্শনকারী এক ধরনের মনোবিকার। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল এবং চিকিৎসালয়ে ভর্তিকৃত অধিকাংশ রোগীই সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। এক হিসাবে দেখা গেছে এদেশে প্রায় তেরো লক্ষ লোক (বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগ) এই রোগে ভুগছে। যৌবনের প্রারম্ভে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সময়েই সাধারণত এ বৈকল্য দেখা দেয়। তবে যে কোন বয়সেই সিজোফ্রেনিয়া দেখা দিতে পারে। তথাপি প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ রোগের প্রকোপ ঘটে ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে।

উন্মাদ রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা 
অপরিমিত শুক্রক্ষয়, অত্যধিক অধ্যয়ন, অতিশয় মানসিক চিন্তা, শোক বা দুঃখ ভোগ, ভালবাসা বঞ্চিত হওয়া, সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়া, অধিক পরিমানে মদ্যপান, ধুতুরাসহ বিভিন্ন ভেষজ খাওয়া ও আরো বহুবিদ কারনে মানুষ পাগল বা উন্মাদ হয়। অনেক ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও মানুষ পাগল হয়।

Ø উন্মাদ রোগে ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচন নির্দেশিকা 

Ø চর্মরোগ চাপা পরিয়া উন্মাদ- কষ্টিকাম, স্ট্র্যামোনিয়াম, সারফার, জিঙ্কাম ইত্যাদি।

Ø প্রসবের পরে উন্মাদ- অরাম মেট, প্লাটিনা, পালসেটিলা, স্ট্র্যামোনিয়াম, ভিরেট্রাম এলবম ইত্যাদি।

Ø ব্যর্থ প্রেম জনিত উন্মাদ- ইগ্নেসিয়া, নেট্রাম মিউর, এসিড ফস, ল্যাকেসিস ইত্যাদি।
ঈর্ষাজনিত উন্মাদ হলে
- ল্যাকেসিস।

Ø অতিরিক্ত রক্তস্রাবের পরে উন্মাদ হলে- চায়না।

Ø অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করার পরে উন্মাদ হলে- বিউফো রানা, ককুলাস ইন্ডিকা।

Ø কামোন্মত্ততাবশত উন্মাদ হলে- ব্যারাইটা মিউর।

Ø ব্যবসা বানিজ্য বা বৈষয়িক দুশ্চিন্তাজনিত উন্মাদ হলে- নাক্স ভুমিকা।

Ø ঋতুবন্ধ হয়ে উন্মাদ হলে- ইগ্নেসিয়া, পালসেটিলা।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত সদৃশ ঔষধসমুহের পার্থক্য বিচার

Ø একোনাইট নেপিলাস 
তরুন উন্মাদনায়, অত্যধিক অস্হিরতা, মৃত্যুভয়, উৎকন্ঠা, উগ্র মেজাজের সহিত পাগলামিতে ইহা উৎকৃষ্ঠ ঔষধ।

Ø লাইসিন বা হাইড্রোফোবিনা
উন্মাদ রোগের এটি একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। অনিদ্রা, জলাতঙ্ক, কামউন্মত্ততা, কামরাইবার ইচ্ছা, রোগী যদি লবনপ্রীয় ও লাইসিনের বিশিষ্ট লক্ষণ বিশিষ্ট উন্মাদ রোগীর জন্য উপযোগী।

Ø হায়োসিয়ামাস
ভয়, হিংসা বা প্রেমে নিরাশ হয়ে উন্মাদ হলে উপযোগী। অশ্লীল ভাষায় গান করে উলঙ্গ হয়ে লিঙ্গ দেখায়, পরনের কাপড় ফেলে দেয়, অত্যন্ত সন্দেহ, সকলকে অবিশ্বাস করে, মনে করে তাহাকে বিষ খাওয়াইয়া মারিতে চায়। মাঝে মাঝে ভাল মানুষের মত চলে। তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবে প্রলাপ বকে, বিছানার উপর বসিয়া দোল খাইতে থাকে। বাড়িতে থাকিয়াই বলতে থাকে বাড়ি যাব। প্রলাপকালে দৈনিক কর্মের আলোচনা করে, কাজকর্ম বা ব্যবসা বানিজ্যের বিপর্যয়বশত উন্মাদে হায়োসিয়ামাসের বিশিষ্ট লক্ষণ মিলিয়ে প্রয়োগে উন্মাদ রোগ বাল হয়।

Ø বেলেডোনা
রক্ত প্রধান ধাতুর রোগী, চোখমুখ রক্ত বর্ণ, আলোক ভীতি, রক্ত চক্ষু, ভীষণ ক্রুদ্ধ, নানা প্রকার মজার মজার বিষয়ে কল্পনা করে, রোগী কামড়াতে চায়, লাঠি দিয়ে আঘাত করতে চায়, ভুতপ্রেত, পোকামাকর দেখে সেই রোগীর জন্য বেলেডোনা উপযোগী।

Ø রাউলফিয়া
সর্ব প্রকার উন্মাদ রোগের শ্রেষ্ঠ ঔষধ।অনিদ্রা, মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চয়, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি লক্ষণে রাউলফিয়া উপযোগী।

Ø নাক্স ভুমিকা
মদ, গাজা, আফিম, ভাং কোন প্রকার নেশা জাতীয় পান করিয়া উন্মাদ।অসংলগ্ন কথা বলে, হাসে কাদে, নাচে, মাঝে মাঝে উলঙ্গ হয়ে যায়। নেশাখোর উন্মাদ রোগীর জন্র নাক্স ভুমিকা অব্যার্থ।

Ø স্ট্র্যামোনিয়াম
চর্মরোগ চাপা পরে,প্রসবের পরে উন্মাদ হলে। রোগী মারতে যায়, গালাগালি করে, এদিক ওদিক দৌড়াতে থাকে, যাহাকে সামনে পায় তাকেই মারতে চায়, ফুর্তি করিয়া নাচতে থাতে, অসংলগ্ন কথা বলতে থাকে, একেলা থাকিতে ভয়পায়, লোক সঙ্গ পেতে চায়।

Ø এনাকার্ডিয়াম অরি
শারীরিক বা মানসিক ব্যাধির সাথে যদি সবাইকে সন্দেহ করার প্রবনতা, স্মরণশক্তি হ্রাস পায়, হিংসুটে ভাব, অযথা অভিসমপাত এবং মিথ্যা কসম খাওয়া, হাঁটার সময় মনে হয় কেউ তাকে অনুসরণ করছে, এখনই ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটবে এমন ভয়, অশরীরি কেহ যেন তাকে আদেশ করছে এবং অন্যজন তাকে নিষেধ করছে, নিজের বা অন্যের উপর আস্থার অভাব ইত্যাদি লক্ষণে এনাকার্ডিয়াম যাদুর ন্যায় কাজ করে।

Ø ল্যাকেসিস

কোন মানসিক রোগী যদি ধর্মীয় কথাবার্তা বেশী বলে। ল্যাকেসিস ঔষধটির আরেকটি প্রধান লক্ষণ হলো ইহার রোগীরা হিংসুটে হয়ে থাকে, অর্থাৎ রোগীর কথা-বার্তায় যদি অন্যদের প্রতি হিংসা প্রকাশ পায়, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো এদের শরীরে এনার্জি থাকে প্রচুর অর্থাৎ এরা অনেক পরিশ্রম করেও কাহিল হয় না।ঈর্ষার কারণে উন্মাদ হলে ল্যাকেসিস উপযোগী।

Ø প্লাটিনাম মেট

অহংকারী সুন্দরী নারী,নিজেকে খুব বড় মনে করে,নিজেকে ব্যতীত সবকিছু তুচ্ছ মনে করে, সাংঘাতিক রকমের যৌনউন্মাদ, ঘনঘন পুরুষ সঙ্গী পাল্টায়, কেউ কেউ দৈনিক বিশ-পঞ্চাশবার যৌনকর্ম করে ইত্যাদি লক্ষণের উন্মাদ রোগীর জন্য প্লাটিনাম মেট উপযোগী।

Ø ট্যারেন্টুলা হিসপেনিকা
চরম মাত্রায় অস্থিরতা, সর্বদা একটা না একটা কিছু করতেই হয়, নড়াচড়া ছাড়া থাকতে পারে না, এমনকি রোগীকে যদি দড়ি দিয়ে টাইট করে বেধেও রাখে তথাপি সে একটি আঙ্গুল হলেও নাড়াতে থাকলে, অপ্রয়োজনে চুরি করার স্বভাব ইত্যাদি লক্ষণে ট্যারেন্টুলা হিসপেনিকা উপযোগী।

Ø সালফার
নোংরা বা অপরিচ্ছন্ন স্বভাবের জন্য সালফার উপযোগী। রাস্তাঘাটে অনেক পাগল দেখা যায়, যারা এতো নোংরা ভাবে থাকে যে, মনে হবে একটি চলমান ডাস্টবিন। এদেরকে যদি একমাত্রা সালফার খাওয়ানো যায়, দেখা যাবে এদের পাগলামীও ভালো হয়ে গেছে এবং পরিস্কার পরিচ্চন্ন থাকতে চেষ্টা করবে। চর্মরোগ চাপা পরে উন্মাদ হলে সালফার উপযোগী।

Ø এগারিকাস

সারাক্ষন মাথাঘুরানি, শরীরের বিভিন্ন পেশীতে কম্পন এবং ঝাকুঁনি, ছড়া কবিতা বানিয়ে বলতে থাকে, শিশুদের মতো ছেলেমানুষি আচরণ, সামনে যাকে পায় চুম্পন করে, রাক্ষুসে ক্ষুধা, ভালো মতো না চিবিয়েই খেয়ে ফেলে, মাথা ঘোরাতে থাকে, পিছনের দিকে পরে যাওয়ার প্রবনতা, বজ্রপাতের সময় রোগের মাত্রা বেড়ে যায়, পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে ফুলা, ঠান্ডা বাতাসে হাঁটলে রোগের মাত্রা বেড়ে যায় ইত্যাদি লক্ষন থাকলে এগারিকাস উপযোগী।
উপসংহার
উন্মাদ একটি মানসিক রোগ তাই মানসিক লক্ষন বিবেচনায় ঔষধ নির্বাচন বিধেয়। মানসিক উত্তেজক কারণ, পরিপোষক কারণ বিবেচনায় অনেক ঔষধ প্রয়োজন রয়েছে। আমার এই লেখা পড়ে নিজে নিজে ডাক্তারী করবেন না। একজন দক্ষ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
Please download my
  apps.Read my all homeopathic topic.
 https://play.google.com/store/apps/details?id=com.aslamconsole.android.evahomeohall&hl=nb

ইভা হোমিও হল।
ডা. ইয়াকুব আলী সরকার
বাইপাইল, সাভার, ঢাকা।
মোবাইল নং ০১৭১৬৬৫১৪৮৮।
গভঃ রেজিঃ নং ২৩৮৭৬।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন