Miasm |
হোমিওপ্যাথিক মতে রোগের মুল কারন বা মায়াজম সম্পর্কে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারগনের অবশ্যই স্বচ্ছ ধারনা থাকা প্রয়োজন।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় কেসটেকিং ও ঔষধ নির্বাচনে ভিত্তি "মায়াজম" জ্ঞান।মায়াজম কি?
মায়াজম(Miasm):
কোন রোগ স্থুল ঔষধ প্রয়োগে বা অসম বিধানে চিকিৎসা করায় তার দ্বারা চাপা পড়ে শক্তিশালী রোগ বীজ নামে দেহাভ্যন্তরে অবস্থান করে।এটাই রোগ-জীবানু বা উপবিষ (Miasm)।
মায়াজম হচ্ছে এমন কিছু যা একবার মানবদেহে ঢুকলে এবং সুচিকিৎসিত না হলে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করে, যা সারা জীবন ধরে চলতে থাকে এবং সন্তান সন্ততির মধ্যেও তার ফলজনিত অস্বাভাবিক অবস্থার চিহ্ন। প্রায়ইশ সুপ্ত অবস্থায় বর্তমান থাকে।
সোরা মায়াজম নয়, একটি মায়াজমেটিক অবস্থা যা সোরিক মায়াজমের দ্বারা সৃষ্টি হয়। সিফিলিস ও সাইকোসিস মায়াজম নয মায়াজমেটিক অবস্থা,যা সিফিলিটিক ও সাইকোটিক মায়াজম দ্বারা সৃষ্টি হয়। একটা গোরাবস্থা এবং তার কারণ এক নয়। টিউবার-কুলোসিস ও টিউবারকুল ব্যাসিলাই কখনই এক হতে পারেনা। দ্বিতীয়টি হলো কারণ এবং প্রথমটি হলো একটি রোগ।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিধান মতে, মায়াজম (রোগ-জীবাণু বা উপবিষ) হলো রোগের মূল কারণ। যে সকল প্রাকৃতিক অদৃশ্য কারণ সমূহ হইতে রোগ উৎপত্তি হয় সে সকল কারণ সমূহকে মায়াজম (Miasm) বলে।
এই উপবিষই (Miasm) যা বংশ পরস্পরায় মানব দেহে চিরস্থায়ী রুপ লাভ করে।
মায়াজম (Miasm) প্রধানত ৪ (চার) প্রকার।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক জার্মানীর ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের মতানুসারে মানুষের পাপের প্রায়শ্চিক্ত ই সোরা বা কুন্ডয়ন। আর সোরার বহিঃ প্রকাশ হলো চুলকানি।
১। সোরিক মায়াজম (Psoric Miasm):
Posra বা কুন্ডয়ন অসম বিধানে চিকিৎসা করায় তা উপবিষ নামে দেহাভ্যন্তরে লুপ্ত অবস্থায় সজীব থাকে।এই সজীব Psora বীজানুই Psoric Miasm.
এন্টিসোরিক মায়াজমেটিক হোমিওপ্যাথি প্রধান ঔষধ
Psor, sulph সহ অন্যান্য ঔষধ।
২। সাইকোটিক মায়াজম (Sycotic Miasm):
Sycotic দেহে অবস্থান নিলে বাহ্যিক ভাবে আচিল বা টিউমার প্রকাশ করে, তা অসম বিধানে চিকিৎসা করলে উপবিষ সৃষ্টি হয়ে দেহে চিরস্থায়ী ভাবে অবস্থান নেয়। Sycosis এর উপবিষই Sycotic Miasm.
এন্টিসাইকেটিক মায়াজমেটিক হোমিওপ্যাথি প্রধান ঔষধঃ
Arg-m, Arg-n, Kali-s, Med, Nat-s, Nit-ac, Sep, Staph, Thuj সহ অন্যান্য ঔষধ।
৩। সিফিলিটিক মায়াজম (Syphilitic Miasm):
যৌন ক্ষত অসম বিধানে চিকিৎসায় চিরস্থায়ীসিফিলিস উপবিষ নামে বীজানু দেহে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পায়। এই Syphilis উপবিষই Syphilitic Miasm
এন্টিসিফিলিটিক মায়াজমেটিক হোমিওপ্যাথি প্রধান ঔষধঃ
Ars-i, Aur, Aur-m, Aur-m-n, Calc-F, Laur, Merc, Metc-i-f, Merc-i-r, Phyt, Still, Syph সহ অন্যান্য ঔষধ।
৪। টিউবারকুলোটিক মায়াজম (Tuberculotic Miasm):
উপরে উল্লেখিত Psoric, Sycotic, Syphilitic এই তিন ধরনের Miasm ই যখন উত্তরসূরীর দেহে স্থানান্তরিত হয় তখন তাকে Tuberculotic Miasm বলা হয়।
এন্টিটিউবারকুলোটিক মায়াজমেটিক হোমিওপ্যাথি ঔষধ
Agar, Bac, Calc, Calc-p, Hep, Iod, Kali-c, Kali-s, Lyc, Phos, Psor, Puls, Senec, Spong, Stann, Sulph, Ther, Tub, Zinc সহ অন্যান্য ঔষধ।
ভেক্সিনেটিক মায়াজম (Vaccinetic Miasm):
সভ্য সমাজে আমরা আরও একটি মানব সৃষ্ট আর এক প্রকার মায়াজম দেখতে পাই। আর তা হলো বিভিন্ন ভেক্সিনেটিক Vaccinetic Miasm.
অর্থাৎ টীকা ও ইনজেকশন মানবদেহে পুশ করার পর যে Miasm এর সৃষ্টি হয়, তাই Vaccinetic Miasm.
এন্টিভেক্সিনেটিক মায়াজমেটিক হোমিওপ্যাথি প্রধান ঔষধঃ
Thuj, Med, Mal, Vac, Sil সহ অন্যান্য ঔষধ।
************************************
হোমিওপ্যাথি মেডিকেল সায়েন্স এর জনক ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান অর্গানন বইয়ের ৭৮ নং সূত্র অনুসারে Miasm আক্রান্ত রোগীই চিররোগ। তাই এ সংশ্লিষ্ট রোগী চিকিৎসায় মায়াজম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা থাকা অবশ্যই দরকার / প্রয়োজন। উল্লেখ্য যে, কেবল মাত্র, প্রাকৃতিক ও সদৃশ বিধান "হোমিওপ্যাথি" চিকিৎসায় ই Miasm ধ্বংস করতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিধান মতে, মায়াজম হল রোগের মূল কারণ এবং জীবাণু গুলো হল উত্তেজক কারণ। যে সকল প্রাকৃতিক অদৃশ্য কারণসমূহ হইতে রোগ উৎপত্তি হয়, সে সকল কারণ সমূহকে মায়াজম বলে।
মহাত্মা হ্যানিম্যান বলেন,
“যাবতীয় রোগ মায়াজমের অশুভ প্রভাবে সৃষ্টি হয়।” মায়াজম শব্দের অর্থ উপবিষ, কলুষ, পুতিবাষ্প, ম্যালেরিয়ার বিষ প্রভৃতি। যাবতীয় রোগের কারণই হল এই মায়াজম। তরুণ পীড়া তরুণ মায়াজমের অশুভ প্রভাবে এবং চিররোগ চির মায়াজমের অশুভ প্রভাবে সৃষ্টি হয়। ইহা প্রাকৃতিক রোগ সৃষ্টিকারী দানব।
হ্যানিম্যান বলেছেন,
চিররোগ সৃষ্টির মূল কারণ হইল তিনটি চিররোগবীজ। ইহাদের মধ্যে সোরা হইল আদি রোগ বীজ। সকল রোগের মূল কারণ হইল সোরা। এমনকি প্রমেহ এবং উপদংশ নামক আদি রোগবীজের উৎপত্তি ও সোরা হতে; এজন্য সোরাকে আদি রোগবীজ বলা হয়।
হ্যানিম্যান️ বলেছেন,
বংশ পরস্পরের মাধ্যমে লাখ লাখ মানব দেহের মধ্যে এই সোরা মায়াজম কল্পনাতীতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন অসংখ্য প্রকারের বিকৃতি, ক্ষত, বিশৃঙ্খলা ও যন্ত্রণার প্রতিমূর্তি রুপে অন্ত পীড়ায় সৃষ্টি করে থাকে।
সুতরাং মায়াজম হচ্ছে এক ধরনের গতিময় দূষণ মাধ্যম যাহা জীব দেহের মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গে একবার প্রবিষ্ট হলে জীবনীশক্তির উপর প্রভুত্ব করে, ব্যক্তিকে সার্বিকভাবে এমনিধারায় দূষিত করে যার পিছনে একটি স্থায়ী রোগজ অবস্থা স্থাপন করে যাহা সম্পূর্ণ রুপে মায়াজম বিরোধী প্রতিকারক দ্বারা দূরীভূত না হলে রোগীর সারাজীবন ব্যাপী বিরাজ করবে এবং বংশপরস্পরায় প্রবাহমান থাকে।
১। সোরার রোগীর ধাতুগত লক্ষণঃ
সর্বদা ভীতিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, অবসাদগ্রস্ত, শ্রমবিমুখ।
মেজাজ খিটখিটে সামান্য মতের অমিল হলে ক্ষিপ্ত হয়।
স্বার্থপরতা কিন্তু নাটকীয় উদারতা দেখায়।
অস্বাভাবিক ক্ষুধা, খেলে আবার ক্ষুধা লেগে যায়।
অসম্ভব চুলকানি, চুলকানোর পর জ্বালা।
হাত পায়ের তলা জ্বলে।
দেহের বর্জ নির্গমন পথগুলি লাল বর্ণের।
যে কোন স্রাব নির্গমনে আরাম বোধ।
দাঁতে, মাড়ীতে ময়লা জমে।
কেবলই শুয়ে থাকতে চায়।
নোংরামি পছন্দ।
স্নয়ুকেন্দ্রে প্রবল বিস্তার করে কিন্তু যান্ত্রিক পরিবর্তন ঘটে না।
যে কোন সময় রোগাক্রমন বা বৃদ্ধি ।
চোখে নানা রং দেখে ও দৃষ্টিভ্রম হয়।
সহ অন্যান্য।
২। সিফিলিসের রোগীর ধাতুগত লক্ষণঃ
আত্নহত্যা করার ইচ্ছা।
নৈরাশ্য, হঠকারিতা, মূর্খতা, বিতৃষ্ণা।
স্মরণশক্তি ও ধারণশক্তি হ্রাস।
মানসিক জড়তায় কথা কম বলে।
মাংসে অরুচি কিন্তু দুগ্ধ খাইবার ইচ্ছা।
অগ্নিকান্ড, হত্যাকান্ডের স্বপ্ন দেখে।
সূর্যাস্ত হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত বৃদ্ধি।
জিহ্বা মোটা ও দাঁতের ছাঁপযুক্ত।
চুলকানীবিহীন চর্মরোগ।
বিকলঙ্গতা।
অস্থির ক্ষয়প্রাপ্তি।
স্রাবের প্রচুরতা, দুর্গন্ধতা এবং স্রাব নিসরনে রোগ বৃদ্ধি।
দুষ্টজাতীয় ফোঁড়া।
অতিরিক্ত গরম-ঠান্ডা অসহ্য।
সহ অন্যান্য।
৩। টিউবারকুলোসিস রোগীর ধাতুগত লক্ষণ-
চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও রোগী একই লক্ষণ ঘুরে ফিরে আসে।
একই সময়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
যে খাবারে বৃদ্ধি সেই খাবারেই আকাঙ্খা।
বিনা কারণে ঠান্ডা-সর্দ্দি লাগে।
যথেষ্ট পানাহার সত্বেও দুর্বলতা, শুষ্কতা শীর্ণতা প্রাপ্ত হয়।
কুকুর ভীতি বিদ্যমান।
উদাসীনতা ও চিন্তাশূন্যতা।
ক্রোধপরায়ণ, অসন্তুষ্ট, চঞ্চল, পরিবর্তনশীল মেজাজ।
কামোত্ততার জন্য যে কোন উপায়ে শুক্রক্ষয় করে।
বার বার চিকিৎসক বদল করে ।
জাঁকজমকের সাথে কাজ শুরু করলেও তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
অনবরত ঘুরে বেড়ানো স্বভাব।
নিদ্রায় চিৎকার করে কথা বলে।
সহ অন্যান্য।
৪। সাইকোসিস রোগীর ধাতুগত লক্ষণঃ
ডাক্তারের কাছে লক্ষণ বলতে গিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ আছে কিনা।
ডাক্তার ঔষধ দিয়েছে! সে আবার খোঁজাখুঁজি করে। কারণ ডাক্তার লক্ষণ গুলো পুরাপুররি শুনল কিনা। আবার জিজ্ঞাস করে কোন ঔষধ কিসের জন্য দিয়েছে।
পড়ালেখা করতে গেলেও সন্দেহ । একলাইন লেখে তো বারবার কাটাকাটি করে। চিন্তা করে এই শব্দের বদলে ঐশব্দ যোগ করি।
ঘর থেকে বের হবে দেখবে সব ঠিকঠাক মত আছে তো?
হিসাব করতে যাবে ব্যবসা অথবা চাকুরিতে সেখানেও সমস্যা, সন্দেহ আর ভূলে যাওয়া।
মনেও সন্দেহ! রাতে এই বুঝি কেউ পিঁছনে পিঁছনে আসছে; আশেপাশে কেউ আছে।
বাজার করতে যাবে সেখানেও সমস্যা এই বুঝি দোকানদার আমাকে ঠকিয়ে বেশি নিল। আমি বাজার করেছি কেউ দেখে ফললো না তো।
এই ডাক্তার আমার রোগ বুঝবে কি বুঝবেনা, আমার রোগ সারাবে কি সারাবে না সন্দেহ। আরো ২-৩ জন ডাক্তার একাত্রিত হলে ভাল হতো।
মনটি রোগের উপর পড়ে থাকে । সব সময় রোগের কথা বলে ।
রোগ সূর্যোদয় হতে সূর্যান্ত পর্যন্ত বৃদ্ধি ।
আঁচিল, টিউমার মাংস বৃদ্ধি, অন্ডকোষ প্রদাহ এর নিদর্শক।
অস্বাভাবিক গঠন। যেমন- হাত পায়ের আঙ্গুল বেশী বা কম।
ঝড়-বৃষ্টির পূর্বে বা সময় ঘনঘন মূত্র ত্যাগ।
সহ অন্যান্য।
৫। ভেক্সিনোসিন রোগীর ধাতুগত লক্ষণঃ
বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকগণ ভ্যাক্সিন সম্পর্কে ভয়াবহ তথ্য দিয়েছেন।তাঁদের মতে ভ্যাক্সিনের কুফল অত্যন্ত মারাত্নক। তাঁদের মতে-
ভ্যাক্সিন কুফলে দেহে শতশত রোগ সৃষ্টি করতে পারে।টিউমার, আঁচিল, দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া, সর্দিকাশি, ক্যান্সারসহ শতশত রোগ।
ভ্যাক্সিন বা টীকার কুফলে দেহে ভ্যাক্সিনেটিক মায়াজম নামক একটি বিশেষ মায়াজমের সৃষ্টি হয়।
বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথিদের মতে, ভ্যাক্সিনের কুফল সম্পর্কে বলেন- "ভ্যাক্সিন দেওয়া মানে এক ডাকাতদলের হাত থেকে গৃহ রক্ষার জন্য আরেকদল ডাকাত নিয়োগ করা।"
নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যবহৃত ডাকাতদল দ্বারা গৃহকর্তা যে আক্রান্ত হবেনা তারইবা গ্যারান্টি কোথায়।
টীকা গ্রহণ করাও তেমন ব্যাপার। কিছু রোগকে ঠেকাতে দেহের মধ্যে মারাত্মক কিছু রোগ কে আক্রমণের সুযোগ করে দেওয়ার নামান্তর।
হোমিওপ্যাথগণ শুধু টীকার কুফল সম্পর্কে অবহিতই করেননি। বরং টীকার কুফল দূর করতে হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধানও আবিষ্কার করেছেন।
হোমিওপ্যাথিতে রয়েছে টীকার কুফল নষ্ট করার জন্যে বিশেষ ধরণের ঔষধ, যে ঔষধগুলো এন্টিভ্যাক্সিনেটিক ঔষধ হিসেবে সুপরিচিত।
যেমন-থুজা,সাইলিসিয়া,এন্টিম টার্ট, হিপার, আর্সেনিক, এপিস, মেজিরিয়াম,ভ্যাক্সিনিনাম, ম্যালেন্ড্রিয়াম, ইচিনেসিয়া ইত্যাদি।
রোগিলিপি প্রণয়ণের সময় রোগীর অতীত ইতিহাসে টীকা দেওয়ার ইতিহাস পাওয়া গেলে টীকার কুফল দূর করতে লক্ষণ সাদৃশ্যে উপরোক্ত ঔষধগুলো থেকে প্রয়োগ করতে হবে।
লক্ষ্য করুন, টীকা বিষাক্ততায় রোগীরা আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখে।
আবার, টীকাজনিত কারণে দেহে সাইকোসিস অবস্থাও সৃষ্টি হতে পারে। উপরে বর্ণিত স্বপ্নটিও সাইকোসিসের স্বপ্ন।
আমরা জানি, আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখে থুজার রোগীরা এবং থুজা একটি এন্টিসাইকোটিক ঔষধ, যেটিকে কিং সাইকোটিক হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাছাড়া টীকার কুফলে দেখা দেওয়া দন্তক্ষয় এবং টিউমারের মত লক্ষণও থুজা উৎপন্ন করতে সক্ষম।এসকল কারণে টীকার কুফলনাশক ঔষধগুলোর মধ্যে থুজাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ ঔষধ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
টীকার কুফলে সৃষ্ট বিশেষ মায়াজমেটিক অবস্থায় অনেক সময় উপযুক্ত ঔষধও ব্যর্থ হতে থাকে।।এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই এন্টিভ্যাক্সিন ঔষধ প্রয়োগ করে আরোগ্যের পথের বাঁধা দূর করতে হবে।
সেরা (ঘাটতি) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিধান মতে, মায়াজম হল রোগের মূল কারণ এবং জীবাণু গুলো হল উত্তেজক কারণ। যে সকল প্রাকৃতিক অদৃশ্য কারণসমূহ হইতে রোগ উৎপত্তি হয়, সে সকল কারণ সমূহকে মায়াজম বলে।
মহাত্মা হ্যানিম্যান বলেন,
“যাবতীয় রোগ মায়াজমের অশুভ প্রভাবে সৃষ্টি হয়।” মায়াজম শব্দের অর্থ উপবিষ, কলুষ, পুতিবাষ্প, ম্যালেরিয়ার বিষ প্রভৃতি। যাবতীয় রোগের কারণই হল এই মায়াজম। তরুণ পীড়া তরুণ মায়াজমের অশুভ প্রভাবে এবং চিররোগ চির মায়াজমের অশুভ প্রভাবে সৃষ্টি হয়। ইহা প্রাকৃতিক রোগ সৃষ্টিকারী দানব।
হ্যানিম্যান বলেছেন,
চিররোগ সৃষ্টির মূল কারণ হইল তিনটি চিররোগবীজ। ইহাদের মধ্যে সোরা হইল আদি রোগ বীজ। সকল রোগের মূল কারণ হইল সোরা। এমনকি প্রমেহ এবং উপদংশ নামক আদি রোগবীজের উৎপত্তি ও সোরা হতে; এজন্য সোরাকে আদি রোগবীজ বলা হয়।
হ্যানিম্যান️ বলেছেন,
বংশ পরস্পরের মাধ্যমে লাখ লাখ মানব দেহের মধ্যে এই সোরা মায়াজম কল্পনাতীতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন অসংখ্য প্রকারের বিকৃতি, ক্ষত, বিশৃঙ্খলা ও যন্ত্রণার প্রতিমূর্তি রুপে অন্ত পীড়ায় সৃষ্টি করে থাকে।
সুতরাং মায়াজম হচ্ছে এক ধরনের গতিময় দূষণ মাধ্যম যাহা জীব দেহের মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গে একবার প্রবিষ্ট হলে জীবনীশক্তির উপর প্রভুত্ব করে, ব্যক্তিকে সার্বিকভাবে এমনিধারায় দূষিত করে যার পিছনে একটি স্থায়ী রোগজ অবস্থা স্থাপন করে যাহা সম্পূর্ণ রুপে মায়াজম বিরোধী প্রতিকারক দ্বারা দূরীভূত না হলে রোগীর সারাজীবন ব্যাপী বিরাজ করবে এবং বংশপরস্পরায় প্রবাহমান থাকে।
১। সোরার রোগীর ধাতুগত লক্ষণঃ
সর্বদা ভীতিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, অবসাদগ্রস্ত, শ্রমবিমুখ।
মেজাজ খিটখিটে সামান্য মতের অমিল হলে ক্ষিপ্ত হয়।
স্বার্থপরতা কিন্তু নাটকীয় উদারতা দেখায়।
অস্বাভাবিক ক্ষুধা, খেলে আবার ক্ষুধা লেগে যায়।
অসম্ভব চুলকানি, চুলকানোর পর জ্বালা।
হাত পায়ের তলা জ্বলে।
দেহের বর্জ নির্গমন পথগুলি লাল বর্ণের।
যে কোন স্রাব নির্গমনে আরাম বোধ।
দাঁতে, মাড়ীতে ময়লা জমে।
কেবলই শুয়ে থাকতে চায়।
নোংরামি পছন্দ।
স্নয়ুকেন্দ্রে প্রবল বিস্তার করে কিন্তু যান্ত্রিক পরিবর্তন ঘটে না।
যে কোন সময় রোগাক্রমন বা বৃদ্ধি ।
চোখে নানা রং দেখে ও দৃষ্টিভ্রম হয়।
সহ অন্যান্য।
২। সিফিলিসের রোগীর ধাতুগত লক্ষণঃ
আত্নহত্যা করার ইচ্ছা।
নৈরাশ্য, হঠকারিতা, মূর্খতা, বিতৃষ্ণা।
স্মরণশক্তি ও ধারণশক্তি হ্রাস।
মানসিক জড়তায় কথা কম বলে।
মাংসে অরুচি কিন্তু দুগ্ধ খাইবার ইচ্ছা।
অগ্নিকান্ড, হত্যাকান্ডের স্বপ্ন দেখে।
সূর্যাস্ত হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত বৃদ্ধি।
জিহ্বা মোটা ও দাঁতের ছাঁপযুক্ত।
চুলকানীবিহীন চর্মরোগ।
বিকলঙ্গতা।
অস্থির ক্ষয়প্রাপ্তি।
স্রাবের প্রচুরতা, দুর্গন্ধতা এবং স্রাব নিসরনে রোগ বৃদ্ধি।
দুষ্টজাতীয় ফোঁড়া।
অতিরিক্ত গরম-ঠান্ডা অসহ্য।
সহ অন্যান্য।
৩। টিউবারকুলোসিস রোগীর ধাতুগত লক্ষণ-
চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও রোগী একই লক্ষণ ঘুরে ফিরে আসে।
একই সময়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
যে খাবারে বৃদ্ধি সেই খাবারেই আকাঙ্খা।
বিনা কারণে ঠান্ডা-সর্দ্দি লাগে।
যথেষ্ট পানাহার সত্বেও দুর্বলতা, শুষ্কতা শীর্ণতা প্রাপ্ত হয়।
কুকুর ভীতি বিদ্যমান।
উদাসীনতা ও চিন্তাশূন্যতা।
ক্রোধপরায়ণ, অসন্তুষ্ট, চঞ্চল, পরিবর্তনশীল মেজাজ।
কামোত্ততার জন্য যে কোন উপায়ে শুক্রক্ষয় করে।
বার বার চিকিৎসক বদল করে ।
জাঁকজমকের সাথে কাজ শুরু করলেও তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
অনবরত ঘুরে বেড়ানো স্বভাব।
নিদ্রায় চিৎকার করে কথা বলে।
সহ অন্যান্য।
৪। সাইকোসিস রোগীর ধাতুগত লক্ষণঃ
ডাক্তারের কাছে লক্ষণ বলতে গিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ আছে কিনা।
ডাক্তার ঔষধ দিয়েছে! সে আবার খোঁজাখুঁজি করে। কারণ ডাক্তার লক্ষণ গুলো পুরাপুররি শুনল কিনা। আবার জিজ্ঞাস করে কোন ঔষধ কিসের জন্য দিয়েছে।
পড়ালেখা করতে গেলেও সন্দেহ । একলাইন লেখে তো বারবার কাটাকাটি করে। চিন্তা করে এই শব্দের বদলে ঐশব্দ যোগ করি।
ঘর থেকে বের হবে দেখবে সব ঠিকঠাক মত আছে তো?
হিসাব করতে যাবে ব্যবসা অথবা চাকুরিতে সেখানেও সমস্যা, সন্দেহ আর ভূলে যাওয়া।
মনেও সন্দেহ! রাতে এই বুঝি কেউ পিঁছনে পিঁছনে আসছে; আশেপাশে কেউ আছে।
বাজার করতে যাবে সেখানেও সমস্যা এই বুঝি দোকানদার আমাকে ঠকিয়ে বেশি নিল। আমি বাজার করেছি কেউ দেখে ফললো না তো।
এই ডাক্তার আমার রোগ বুঝবে কি বুঝবেনা, আমার রোগ সারাবে কি সারাবে না সন্দেহ। আরো ২-৩ জন ডাক্তার একাত্রিত হলে ভাল হতো।
মনটি রোগের উপর পড়ে থাকে । সব সময় রোগের কথা বলে ।
রোগ সূর্যোদয় হতে সূর্যান্ত পর্যন্ত বৃদ্ধি ।
আঁচিল, টিউমার মাংস বৃদ্ধি, অন্ডকোষ প্রদাহ এর নিদর্শক।
অস্বাভাবিক গঠন। যেমন- হাত পায়ের আঙ্গুল বেশী বা কম।
ঝড়-বৃষ্টির পূর্বে বা সময় ঘনঘন মূত্র ত্যাগ।
সহ অন্যান্য।
৫। ভেক্সিনোসিন রোগীর ধাতুগত লক্ষণঃ
বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকগণ ভ্যাক্সিন সম্পর্কে ভয়াবহ তথ্য দিয়েছেন।তাঁদের মতে ভ্যাক্সিনের কুফল অত্যন্ত মারাত্নক। তাঁদের মতে-
ভ্যাক্সিন কুফলে দেহে শতশত রোগ সৃষ্টি করতে পারে।টিউমার, আঁচিল, দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া, সর্দিকাশি, ক্যান্সারসহ শতশত রোগ।
ভ্যাক্সিন বা টীকার কুফলে দেহে ভ্যাক্সিনেটিক মায়াজম নামক একটি বিশেষ মায়াজমের সৃষ্টি হয়।
বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথিদের মতে, ভ্যাক্সিনের কুফল সম্পর্কে বলেন- "ভ্যাক্সিন দেওয়া মানে এক ডাকাতদলের হাত থেকে গৃহ রক্ষার জন্য আরেকদল ডাকাত নিয়োগ করা।"
নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যবহৃত ডাকাতদল দ্বারা গৃহকর্তা যে আক্রান্ত হবেনা তারইবা গ্যারান্টি কোথায়।
টীকা গ্রহণ করাও তেমন ব্যাপার। কিছু রোগকে ঠেকাতে দেহের মধ্যে মারাত্মক কিছু রোগ কে আক্রমণের সুযোগ করে দেওয়ার নামান্তর।
হোমিওপ্যাথগণ শুধু টীকার কুফল সম্পর্কে অবহিতই করেননি। বরং টীকার কুফল দূর করতে হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধানও আবিষ্কার করেছেন।
হোমিওপ্যাথিতে রয়েছে টীকার কুফল নষ্ট করার জন্যে বিশেষ ধরণের ঔষধ, যে ঔষধগুলো এন্টিভ্যাক্সিনেটিক ঔষধ হিসেবে সুপরিচিত।
যেমন-থুজা,সাইলিসিয়া,এন্টিম টার্ট, হিপার, আর্সেনিক, এপিস, মেজিরিয়াম,ভ্যাক্সিনিনাম, ম্যালেন্ড্রিয়াম, ইচিনেসিয়া ইত্যাদি।
রোগিলিপি প্রণয়ণের সময় রোগীর অতীত ইতিহাসে টীকা দেওয়ার ইতিহাস পাওয়া গেলে টীকার কুফল দূর করতে লক্ষণ সাদৃশ্যে উপরোক্ত ঔষধগুলো থেকে প্রয়োগ করতে হবে।
লক্ষ্য করুন, টীকা বিষাক্ততায় রোগীরা আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখে।
আবার, টীকাজনিত কারণে দেহে সাইকোসিস অবস্থাও সৃষ্টি হতে পারে। উপরে বর্ণিত স্বপ্নটিও সাইকোসিসের স্বপ্ন।
আমরা জানি, আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখে থুজার রোগীরা এবং থুজা একটি এন্টিসাইকোটিক ঔষধ, যেটিকে কিং সাইকোটিক হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাছাড়া টীকার কুফলে দেখা দেওয়া দন্তক্ষয় এবং টিউমারের মত লক্ষণও থুজা উৎপন্ন করতে সক্ষম।এসকল কারণে টীকার কুফলনাশক ঔষধগুলোর মধ্যে থুজাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ ঔষধ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
টীকার কুফলে সৃষ্ট বিশেষ মায়াজমেটিক অবস্থায় অনেক সময় উপযুক্ত ঔষধও ব্যর্থ হতে থাকে।।এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই এন্টিভ্যাক্সিন ঔষধ প্রয়োগ করে আরোগ্যের পথের বাঁধা দূর করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে মায়াজমের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
সোরা দৈহিক গঠনগত কোন পরিবর্তন সাধন না করিয়া বরং ক্রিয়াগত পরিবর্তন করে ।
চুল- শুঙ্ক, কর্কশ,খুশকি যুক্ত
চর্ম - শুস্ক,কর্কশ
নখ- শুস্ক,কর্কশ
ঠোঁট- শুস্ক,সাইয়ানোসিসের মতো নীলাভ
মুখমণ্ডল - নীলাভ মুখমণ্ডল
মুখভঙ্গি - উদ্বিগ্ন,নার্ভাস, ভীতু শঙ্কিত
পোশাক- হালকা রংয়ের পোশাক পরে।
সিফিলিস (ধবংস) :
চুল- চুল কম,চুল পড়ার কারনে সংখা কম।হালকা চুল
চর্ম - ফাটা ফাটা, ক্ষতযুক্ত
নখ- পাতলা,ভগুর, লম্বা ফাটাযুক্ত,গর্ভযুক্ত, অবতল চামচের মতো।
ঠোট - ফাটাযুক্ত
মুখমণ্ডল - লালচে মুখমণ্ডল, জন্মগত অসাভাবিকতা (যেমন- ঠোট কাটা, তালুকাটা)
মুখভঙ্গি - নির্দয়, পাশবিক,প্রতি-হিংসাপরায়ন, আক্রোশ,
পূর্ণ, উগ্র,নিস্তেজ,ভগ্ন বা বিষন্ন চেহারা।
পোশাক - কালো,ফ্যাকাসে, অসামজস্য রং এর পোশাক পরে।
সাইকোসিস :
চুল- শরীরে অধিক চুল,ঘন চুল
চর্ম - পুরু বা ভারী,মাছের আইঁশের মতো,কোষ কোষ
নখ- পুরু, শিরাযুক্ত,ঢেউ যুক্ত, উত্তল
ঠোট - পুরু বা ভারী
মুখমণ্ডল - হলুদাভ,ফোলা ফোলা ভাব,জন্মগত বা অর্জিত ওভার গ্রোথ।
মুখভঙ্গি - লোলুপ, সন্দেহ প্রবণ, ধুর্ত,হিংসার্থক,দুষ্ট
পোশাক - হলুদ রং বা গাঢ় উজ্জল রংয়ের পোশাক পরে।
টিউবারকুলোসিস বা উচ্ছাস ও ক্ষয় :
চুল- চুল ভেগুে যায়,চুল ফেটে যায়,জট পাকায়
চর্ম - অতিরিক্ত রক্তসঞ্চালন যুক্ত, রক্তক্ষরণ যুক্ত।
নখ- উজ্জল চকচকে মসৃন,নখের নিচে রক্তের উচ্ছাস, সাদা স্পটযুক্ত।
ঠোট - উজ্জল লাল,রক্তের উচ্ছাস যুক্ত।
মুখমণ্ডল - রক্ত বর্ন, গাল লাল(red cheek)
মুখভঙ্গি - উদাসীন, অসুন্তুুস্ট, স্বাধীন, একগুঁয়ে - জেদী, অস্থির।
পোশাক - লাল, লালচে বেগুনী, গোলাপী পোশাক পরিধান করে।
হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারগনকে এই মায়াজম বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরী।রোগ ও রোগীর লক্ষণ সমষ্টি তৈরীর ক্ষেত্রে যদি ডাক্তারগন মায়াজম অনুযায়ী পৃথক করতে সক্ষম হন তবে রোগ নিরাময় সহজ হয়।
আমার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিষয়ক সকল লেখা একসাথে পড়ুন।এপসটি ডাউনলোড করুন,আপডেট নিন। আমার মোবাইল এপস লিঙ্ক ঃ
ড. ইয়াকুব আলী সরকার
ইভা হোমিও হল।
গভঃ রেজিঃ নং ২৩৮৭৬
মোবাইল নং ০১৭১৬৬৫১৪৮৮
বাইপাইল,আশুলিয়া,সাভার,ঢাকা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন