বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২০

ব্রাইয়োনিয়া এলবমের পরিচিতি ও প্রয়োগ ক্ষেত্র।

Bryonia Album Homeopathic remedy

Bryonia Alba ব্রায়োনিয়া এল্বা্বামঃ
পরিচয়ঃ 

ইহার অপর নাম ওয়াইল্ড-হপ্ ।
ইউরোপের এক প্রকার লতা ।(শ্বেত মাকাল ফলের মত এক প্রকার গাছড়ার শিকড় হইতে ইহা প্রস্তুত হয় ।
ধাতুগত বৈশিষ্ট্যঃ 

সন্ধিবাত প্রবণ ধাতুসম্পন্ন ব্যক্তি,যাহারা প্রায়ই পিত্তবিকৃতিবশতঃ রোগ ভোগ করে,গাঢ় কৃষ্ণবর্ণ,কেশ,শ্যামাঙ্গ,দৃঢ় মাংসপেশী,ঘামশূন্য,সামান্য কারণে যাহারা কাতর হইয়া পড়ে তাহাদের পীড়ায় অধিক উপযোগী।
কাতরতাঃ
গরম সহ্য করিতে পারে না। নাতিশীতোষ্ণ হাওয়া প্রিয়।
মায়াজমেটিক অবস্থাঃ 

মায়াজমের দোষ নষ্ট করার শক্তি।ইহা একটি তরুণ জাতীয় ঔষধ।
মূল কথাঃ
ভবিষ্যৎ সর্ম্পকে উদ্বেগ।
দারিদ্রতার ভয়, অনাহারে থাকার ভয়।
বিছানার প্রতি অনীহা, বাহিরে যেতে চায়।
বিরক্তি চায় না/বিরক্ত হতে অনীহা, চুপচাপ থাকতে চায়,বিশ্রাম চায়।অস্থিরতা, বিছানা হতে উঠে পড়ে।ব্যবসার কথা বলে এবং ব্যবসার স্বপ্ন দেখে।ভোগান্তির ভয়,নোংরা, সবকিছু নোংরা করে।অসৎ,হীনমনা,

দরকষাকষি করে/ বারগেইনিং করে।
অধ্যবসায়,ধীরগতিযুক্ত এবং ক্রমগতিযুক্ত পীড়ালক্ষণ;কোন পীড়াই হঠাৎ আসে না, অতি ধীরে ধীরে ক্রমেক্রমে বৃদ্ধি পায়;শুষ্কতা, মুখগহবর শুষ্ক, গুহ্যদ্বার শুষ্ক, কাশি শুষ্ক-ফলেে পিপাসা,
অনেকক্ষণ পর পর অনেকখানি করিয়া পানি পান করিতেচায় ;নড়া চড়ায়/ সঞ্চালনে সকল কষ্টের বৃদ্ধি;আক্রান্ত অংশে চাপ দিতে বা টিপাইতে ভালবাসে;আক্রান্ত পার্শ্বে শয়ন করিলে উপশম;চাপনে সকল কষ্টের উপশম; বদমেজাজী ও জেদি।সূচঁ ফোটানবৎ বেদনা।মাথা যেন ফেটে দুখন্ড হয়ে যাবে-এমন অনুভূতি।ঋতুস্রাবের পরিবর্তে নাক বা মুখ দিয়ে রক্তস্রাব।স্তন প্রদাহ, স্তনদ্বয় বির্বণ, উত্তপ্ত,শক্ত, ভারী ও বেদনাযুক্ত।বার বার দীর্ঘশ্বাস নেয়ার ইচ্ছা, ফুসফুস প্রসারিত করারদরকার হয়।কাশিলে মাথায় ও বুকে ব্যথা লাগে,হাত দিয়ে বুক  চেপেধরতে হয়।নড়াচড়ায় বৃদ্ধি এবং সর্ব পীড়াতেই চুপচাপ পড়িয়া থাকিলে উপশম।শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির শুষ্কতা।প্রবল পিপাসা সত্ত্বেও ঘন ঘন জল না পান করে,অনেকক্ষণ পর পর একবারে অনেকটা জল পান করে।আক্রান্ত স্থান বা বেদনাযুক্ত স্থান (পেটের ব্যাথা ছাড়া ) চাপিয়া ধরিলে উপশম।কোষ্ঠবদ্ধতা নিত্য সঙ্গী;তবে- ডায়রিয়াও দেখা দেয় কখনও কখনও।ক্রুদ্ধভাব এবং ক্রুদ্ধ হইবার ফলে অসুস্থতা।প্রলাপকালে মনে করে যে, সে তাহার বাড়ীতে নেই এবং বাড়ী যাব বাড়ী যাব বলিয়া থাকে।প্রলাপকালে কখনও সে দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের কথা বলিয়া থাকে।
জ্বর সাধারণত রাত্রি ৯ টায় বৃদ্ধি পাইয়া সমস্ত রাত্রি চলিতে থাকে।
শিশু জিনিষের জন্য বায়না ধরে, তা দিলে কিন্তু নিতে চায় না।শিশু কোলে উঠতে চায় না, বিছানা থেকে উঠাতে গেলে বিরক্ত হয়।
শুকনো মল, যেন আগুনে পোড়ানো হয়েছে। 

প্রয়োগস্হলঃ
সকল প্রকার জ্বর, মদ্যপানাদির মন্দফল, রজঃস্বল্পতা, নাসিকা হইতে রক্তপাত,স্তনের প্রদাহ,ব্রন্কাইটিস, নিউমোনিয়া, প্লুরিসি, সর্দ্দি, ইনফ্লূয়েঞ্জা,বাত রোগ, গেটে বাত,মুখে ক্ষত, কোষ্ঠ-কাঠিন্য,কটি বেদনা, শিরঃপীড়া, হাম, বসন্ত, ন্যাবা, দন্তশূল,যকৃতের নানাবিধ রোগ, উদারাময় প্রভৃতি পীড়া ।
ক্রিয়াস্থলঃ 

ফাইব্রাস টিস্যু, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, লিভার,
পেশীতন্ত্র, শ্বাসপথ,খাদ্যনালীর শ্লৈষ্মিক
ঝিল্লীতে ইহার প্রধান ক্রিয়া।
উপশম/হ্রাসঃ 

ঢেঁকুর উঠিলে, সিঁড়ি দিয়া নামিলে, ঠান্ডা
খাদ্যে বা পানীয়ে, চাপ দিলে, বিছানায় শরীর গরম হইলে, গরম সেঁক দিলে (যন্ত্রণা),  বেদনাদায়ক পার্শ্বে শয়নে, প্রচাপনে, বিশ্রামে, শীতল বস্তুতে, চুপ করিয়া শুইয়া থাকিলে, ঘাম হইলে উপশম,উদর ব্যতীত সকল স্থানের বেদনা চাপিলে বা টিপিলে
উপশম, মাথার বেদনা ভিন্ন সকল স্থানের বেদনাউত্তাপে উপশম।সূঁচিবিদ্ধবৎ এবং ছেদনবৎ বেদনা,নড়াচড়ায় ইহাদের বৃদ্ধি এবং বিশ্রামে ইহাদের উপশম।
বৃদ্ধিঃ 

সন্ধ্যায়, রাত ৯টা পযর্ন্ত, বিছানায় বসিলে, গরম খাদ্যে, কাশির সময়, খাইবার পর, চর্মরোগ চাপা পড়িয়া,হামের পর, সকালে, গরম কালে, স্রাব রোধ হইয়া,হেঁট হইলে, জোরে নিঃশ্বাস লইলে, চোখ বুজিলে, নড়াচড়ায়, উত্তাপে, প্রাতকালে, যে কোন
প্রকার নিঃসরণ বন্ধ হইলে, আহারে, উষ্ণ আবহাওয়ায়,পরিশ্রমে, স্পর্শে উপসর্গের বৃদ্ধি।সকালবেলা অলসভাব অধিক প্রকাশ পায় এবং রাত্রেরঘুমে যেন একেবারেই শ্রান্তি দূর হয় না-এমন অনুভব।ধীরগতিযুক্ত এবং ক্রমগতিযু্ক্ত পীড়ালক্ষণের  আবির্ভাব-ইহাইব্রায়োনিয়ার প্রধান বিশিষ্টতা।
ইহার
কোনও পীড়াই হঠাৎ আসে না, অতি ধীরে
ধীরে, ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাইয়া পীড়াটি দুুুুোগ্যরাররার হইয়া উঠে ।
ক্রিয়া স্থিতিকালঃ 

৭-২১ দিন।
ক্রিয়ানাশকঃ

ক্যামোমিলা,নক্স ভমিকা,একোনাইট,
ক্যাম্ফর, চেলি, কফি, ইগ্নেসিয়া, এসি-মিউর, পালসেটিলা,রস, সেনেগা।
কমপ্লিম্যান্ট বা পরিপূরকঃ 

(একটি ঔষধ অন্যটির কাজ
সমাপ্ত করে) এলুমিনা ।
সর্তকতা: 

ব্রাইওরিয়ার আগে বা পরে ক্যালকেরিয়া কার্ব কখনও দিবেন না।
 *ডাঃ এইচ. সি. মরো । 
* ব্রাইওনিয়া রোগীকে জেরা করো না, তাতে তার রোগ  যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায়।
*ডাঃকেন্ট। 
* গর্ভাবস্থায় ইহার প্রয়োগ ক্ষতিকর হতে পারে,অবশ্যই অভিজ্ঞতা ও সতর্কতা বাঞ্ছনীয়। 
*ডাঃ মরো ও কায়াকেনবার্গ।
*সর্দি, কাশি, জ্বর, প্লুরিসি, নিউমোনিয়া, যাই হোক না কেন, শুধু এক মাত্রার ৩০ শক্তিই বিষ্ময়কর ভাবে কাজ করে।এটি পুনঃ প্রয়োগ করা উচিৎ নয়; পুনঃপ্রয়োগে ব্রাইওনিয়ার ক্রিয়া দারুণ ভাবে বিঘ্নিত হয়। 
ইহা পুনঃ প্রয়োগের ফলে ১০০ টির মধ্যে ৯৯ টি রোগীর ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।ডাঃকে. বি ভঞ্জ।
(Inimical food) ঔষধের পরিপন্থী বা অনিষ্টকর খাদ্য:
রোগীকে ব্রাইওনিয়া ব্যবহারকালীন সময়ে লেবুররস খেতে দিও না; কারণ লেবু ও অম্লদ্রব্য ব্রাইওনিয়ার বিসদৃশ (inimical) সম্বন্ধ ।* ডাঃ কেন্ট। 

ইহা ছাড়া বাঁধাকপি, রুটি, মটর-ডাল, শিম, বরবটি, উষ্ণখাদ্য, পেট ফাঁপাজনক খাদ্য, পঁচা মাংসের কাবাব,মশলাযুক্ত খাদ্য,
স্যালাড, ন্যাশপাতি, ঝিনুক, দুগ্ধ, চর্বি, গরম খাদ্য, শীতলখাদ্য, কফি, বিয়ার, মদ্য, কাঁচা খাদ্য, সবুজ শাক-সবজী ।
(Antidote food) ঔষধের ক্রিয়ানাশকঃ খাদ্য: কর্পূর।
লক্ষণ সূত্রঃএম, ভট্রাচার্য্য: পৃষ্ঠা-১৯০, এন, সি ঘোষ:পৃষ্ঠা-১৭২, উইলিয়াম বোরিক: পৃষ্ঠা-৯৪, নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়: পৃষ্ঠা-১৩৩, অতুল কৃষ্ণ দত্ত:পৃষ্ঠা-২৪১, ই. এ. ফ্যারিংটন: পৃষ্ঠা-২৩১, জেমস টেইলর: কেন্ট পৃষ্ঠা-১৯০, নীলমনি ঘটক: পৃষ্ঠা-১৫৭, ই. বি: ন্যাশ পৃষ্ঠা-১৯, জে এম মিত্র:পৃষ্ঠা-১৮৮, এস কে সাহা:পৃষ্ঠা-৩৩০, এইচ. সি এলেন: পৃষ্ঠা-৬৭, জন হেনরিক্লার্ক: পৃষ্ঠা-২৯৮ ।
(সংগৃহীত ও সঙ্কলিত)


ডাঃ ইয়াকুব আলী সরকার
ডি.এইচ.এম.এস(ঢাকা)।এম.এস.এস।
গভঃ রেজিঃ নং ২৩৮৭৬
বাইপাইল,আশুলিয়া,সাভার,ঢাকা।
মোবাইল নাম্বার ০১৭১৬৬৫১৪৮৮।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন