বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

হিষ্টিরিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

Homeopathy treatment for hysteria
হিষ্টিরিয়া কি ? কারণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

হিষ্টিরিয়া রোগ আক্রমণের পূর্বে রোগী হাসে,চিৎকার করে কাঁদে,অসংলগ্ন কথা বলে,গালাগালি করে পরে অজ্ঞান হয়ে যায়। চোখ বন্ধ করিতে থাকে, দাঁত লেগে যায়। এই রোগকে আমাদের দেশে ভূতে ধরা বলে।স্নায়ুবিক উত্তেজনার কারণে এই রোগ বেশি হয়। শোক, দুঃখ, ভয়, হিংসা, অলসতা, বিলাসিতা, মনের দুঃখ মনে চেপে রাখা, অনিয়মিত ঋতু স্রাব, জরায়ু সম্বন্ধীয় কোন পিড়া, মানসিক দুঃশ্চিন্তা, যৌবন কালে বিবাহ না হওয়া আরো নানাবিধ কারনে এই রোগ হতে পারে। পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের এই রোগ বেশি হয়। হিস্টিরিয়া একটি মানসিক ব্যাধি। দুশ্চিন্তা থেকে এ রোগের সৃষ্টি হয়। এ রোগ আরও যে কারণে হয়ে থাকে, তা হলো অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা ও প্রবল মানসিক চাপ, অতীতের কোনো ঘটনা থেকে উদ্ভূত, দীর্ঘদিন ধরে কোনো জটিল অসুখে আক্রান্ত, বংশগত কারণ, যৌন অতৃপ্তি, যৌন অত্যাচার, যৌন বিকৃতি, ডিমেনসিয়া, ব্রেইন টিউমার, প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা ইত্যাদি। হিস্টিরিয়া আক্রান্ত রোগী আচমকা অসুস্থবোধ করতে পারেন। বারবার খিঁচুনি হতে হতে অজ্ঞান হয়ে যান। রোগী দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। হাত-পা অসাড় হয়ে যেতে থাকে। কখনো পঙ্গুত্ব আসতে পারে। রোগীর কথা বলার ক্ষমতা থাকে না। তলপেট ক্রাম্প ধরে যায়। বুক ধড়ফড় করে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়তে থাকে। অনেক সময় রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়। বুকের কাছে অস্বস্তি হতে থাকে। কখনো মনে হয় গলার কাছে কিছু আটকে আছে।দাঁতে দাঁত লেগে যায়। মাথা ও ঘাড়ের কাছে থাকা শিরা ফুলে যায়। অনেক সময় রোগী অকারণে হাসতে থাকেন। কখনো কেঁদে ওঠেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে দেখা যায়, রোগী কখনো উত্তেজনায় হাত-পা ছুঁড়ছেন, কাঁপতে কাঁপতে, ঝাঁকুনি দিয়ে চলাফেরা করছেন। তবে কোনো উপসর্গও ইচ্ছাকৃত নয়, সবকিছুই মানসিক অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মানসিক লক্ষণ বিশেষ গুরুত্ব পায়। কারণ খুঁজে বের করে মনোলক্ষণের ভিত্তিতে ওষুধ দিলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
প্রথমেই রোগীর কোনো বন্ধু বা আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা উচিত যে, রোগীর কোনো রোগ রয়েছে কি না, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, মৃগিরোগ ইত্যাদি এবং রোগী কোনো অসুস্থতার জন্য কোনো ওষুধ গ্রহণ করছিল কি না।
এসব তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হাইপারটেশন কিংবা মৃগিরোগের ক্ষেত্রে। রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে কি না সেটি পরীক্ষা করে দেখ উচিৎ।
** রোগীর শ্বাসপথে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে যেমন জিহ্বা পেছনের দিকে চলে গেলে সেটি মুক্ত করুন। এ ক্ষেত্রে দুই চোয়ালের কোনা বুড়ো আঙুল দিয়ে সামনের দিকে ঠেলুন।

** মাথা এক পাশে কাত করে দিন।
** প্রয়োজনে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিন।
** মুখে কিছু খাওয়াবেন না।
** কৃত্রিম দাঁত থাকলে সেটা সরিয়ে ফেলুন এবং এক টুকরো কাপড় দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।
** যদি শ্বাস-প্রশ্বাসে আওয়াজ হয় তাহলে রোগীকে বালিশের সাপোর্ট দিয়ে থ্রি কোয়ার্টার এল পজিশনে রাখুন।

** রোগীর কাপড় চোপড় ঢিলা করে দিন।
** রোগীকে গরম রাখুন।
** রোগীর পা ওপরে তুলুন এবং মাথা নিচের দিকে রাখুন। তবে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীকে এমন করা যাবে না।
** রোগীকে একা রেখে যাওয়া যাবে না।
** রোগীর মল-মূত্র পরিষ্কার করুন।
** রোগীর খিঁচুনি হলে জিহ্বায় যাতে কামড় না লাগে সেজন্য দুই সারি দাঁতের মাঝে শক্ত কিছু রাখুন।
** যদি উচ্চমাত্রার জ্বর থাকে তাহলে কোল্ড স্পনজিং করুন।
** বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে নিয়মমাফিক ব্যবস্থা নিন।

হিষ্টিরিয়া রোগীর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ সমুহের বর্ণনাঃ

ইগ্নেশিয়াঃ-অত্যন্ত পরিবর্তনশীল মেজাজ, হাসতে হাসতে আবার কাঁদতে আরাম্ভ করে।মনের দুঃখ মনে চেপে রাখে।দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।তামাকের গন্ধ সহ্য হয় না,তামাক সিগারেটের গন্ধে মাথার যন্ত্রনা বৃদ্ধি।কিছু চিবালেই গালে কামর লাগে।ব্যাথা যন্ত্রনা কিছুই সহ্য করতে পারে না।মাথার একপাশে যেন একটি পেরেক  ঢোকানো হচ্ছে সেইরুপ ব্যাথা অনুভুত হয় ফলে যেই পাশে যন্ত্রনা সেইপাশে চেপে শুইলে আরাম পায়।সহজেই উত্তেজিত মন,রোগি দুঃখিত তভু হাসিতে থাকে।ব্যার্থ প্রেমের কুফলে রোগ আক্রমন।।শোক,দুঃখ,ভয় কিংবা ব্যর্থ প্রেমের ইতিহাস থাকলে এটি ব্যর্থ হয় না।

ভ্যালেরিয়ানাঃ-হিষ্টিরিয়া রোগের ভাল ঔষধ।দেহের লাল অংশ গুলো সাদা হয়ে যায়।দেহ যেন হাওয়ায় ভাসছে এইরকম মনে হয়।অতিরিক্ত চা পানের কারনে রোগ আক্রান্ত হইলে। রোগী হঠাৎ পরিবর্তন,এই মাত্র রাগ আবার কিছু সময় পরই নম্র,মাত্রই হাসে একটু পরই কাঁদে ইত্যাদি লক্ষনে এটি উপকারি।

কোনিয়মঃ-যুবক যুবতী চির কুমারী,বিধবা যুবতী কাম ইচ্ছাকে দমিয়া রাখার ফলে হিষ্টিরিয়া রোগ হলে এটি গুরুত্যপূর্ণ।

নাক্স মস্কেটাঃ- ইহা মূর্চ্ছা রোগের উৎকৃষ্ঠ ঔষধ।রোগির মন অত্যন্ত পরিবর্তনশীল ।অত্যন্ত পরিবর্তনশীল মেজাজ, হাসতে হাসতে আবার কাঁদতে আরাম্ভ করে।শরীর খুব দুর্বল।কখনও অজ্ঞান হইয়া পড়ে।দাত লেগে খিচুনি ধরে।প্রভৃতি লক্ষনে ও গর্ভিনীদের মুর্ছা রোগে এটি উপকারি।

ক্রোকাস স্যাটঃ-রোগীনির মানসিক পরিবর্তন হঠাৎ প্রফুল্ল হাসে,নাচে,গান গায়।সবাইকে ভালবাসে আদর করে।কিছু সময় পরই কান্না আরম্ভ করে।আত্বীয় স্বজনকে গালি দেয়।এই সময়ে রোগীর মনে হয় পেটে যেন একটি জীবন্ত বস্তু নড়াচড়া করে।ইত্যাদি লক্ষনে এটি অব্যার্থ মহৌষধ।

পালসেটিলাঃ-নম্র স্বভাব,কোমল মন,অল্প কথায় মনে ব্যাথা,অভিমানী,শীত কাতর,উথফুল্ল বাতাসের আকাঙ্খা।কোন কিছুতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এই ধাতুর রোগীদের ঋতুর গোলযোগ হেতু হিষ্টেরিয়ায় ইহা উপকারী।

ক্যানাভিস ইন্ডিকাঃ-অত্যান্ত ভুলোমন,কথা বলতে বলতে কি বলছিল ভুলে যায়।তুচ্ছ কথায় খিল খিল করে হাসতে থাকে।তার সময় কাটে না এক সেকেন্ড তার কাছে এক যুগ মনে হয়।পেরিলিয়ামের রোগিরা ভাবে সে যেন একটি বলের উপর বসে আছে।

আর্সেনিক এলবমঃ-অত্যন্ত অবসন্ন তার জন্য মূর্চ্ছা।রোগীর অবসাদ,বিষন্ন হতাশ ও উদাসীন।উদ্বেগ,ভীত,অস্থির,বিরক্তিপূর্ণ,খিটখিটে,অনুভুতি পূর্ণ, অল্পতেই বিরক্ত হয়।মৃত্যু ভয়ে কাতর।রোগ আরগ্যের জন্যে হতাশ,ভাবে সে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে।একা থাকতে ভয় পায়,একা থাকতে ভীতি ও মৃত্যু ভয় বৃদ্ধি।মৃত্যু ভয়ে বিছানায় যেতে চায় না।মধ্য রাতের পর ও দুপুরের পরে রোগ যন্ত্রনা বৃদ্ধি পায়।

কোকুলাস ইন্ডিকাঃ-মাতাল ও নিদ্রাহীনতা,মানসিক উত্তেজনা ও রাত জাগার কুফল,নিদ্রার সামান্য ঘাটতিতে দূর্বল হয়।রাগ বা দুঃখে হাত পা খিচুনীর সাথে মূর্চ্ছা যায়।মাথা ঘুরে ,মাতালের মত টলমল করতে থাকে

এসাফোর্টিডাঃগ্লোবাল হিস্টিরিয়া-পেটে ভয়ানক বায়ু জমে,সেই বায়ুর সাথে পেট ফোলা,একটি গোলারমত বস্তু ঠেলে উপরের দিকে উঠে গলা পর্যন্ত যায়।বুক সাটিয়াধরে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।রোগীর রসুনের গন্ধযুক্ত ঢেকুর উঠে।কথনও দুর্গন্ধযুক উদরাময় হয়।খাদ্য গ্রহনের পরেই বমি করে বমিতে মলের গন্ধ পাওয়া যায়।

এগনাষ্ট ক‍্যাক্টাস:রোগী অন্যমনস্ক,বোধশক্তি কম,কোন কিছু স্মরণ রাখতে পারে না,একই কথা দুইবার পড়তে হয় বুঝার জন্য।ব্যাভিচারী,গনোরিয়া গ্রস্হ,বিসন্ন,মানসিক বিশৃংখলা, নিজে নিজেকে ঘৃণা করে,নাকে হেরিং মাছ বা মৃগনাভির গন্ধ পায়।স্তন্যদায়ী মায়ের স্তন দুগ্ধের অভার ও দুর্বলতা সাথে হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত।ইন্দ্রিয়ের অপব্যবহার ও শুক্রক্ষয় থেকে সে হিস্টিরিয়াগ্রস্হ হয়ে থাকলে এগনা্‌ষ্ট ক্যাক্টাস উপযোগী।

স্টিক্টা:পা দুটি যেন হাওয়ায় ভাসছে।রোগীর সর্দি কাশি শুরু হওয়ার সময় মাথায় ভারবোধ ও বেদনায় কাতর হয়ে উঠে।সর্দিস্রাব শুরু হলে আরামবোধ হয়।নাক বন্ধ থাকে ও হাচি কাশি থাকে।হিস্টিরিয়া অবস্হায় রোগীর হাম,যক্ষা কাশি ইত্যাদি থাকলে উপযোগী।
রেপার্টরির সাহায্যে হিস্টিরিয়ার সদৃশ ঔষধ নির্বাচনঃবোরিকের রেপার্টরি

HYSTERIA -- Acon., Agn., Ambra, Am. val., Apis, Aquil., Asaf., Aster., Bell., Cact., Cajup., Camph. monobr., Can. ind., Castor., Caul., Cham., Cim.Cocc., Con., Croc.Eup. ar.Gels., Hyos., Ign.Kali p., Lil. t., Mag. m., Mosch., Myg., Nux m., Orig., Phos. ac., Phos.Plat., Poth., Puls., Scutel., Senec., Sep., Stram., Strych. p., Sumb.Tar. h., Ther., Val.Zinc. v.
কেন্ট রেপার্টরিঃ
hysterical : Absin., Act-r., alum.apis.ars., Asaf.aur.bell.bry.calc-s., calc.cann-s., caust.cedr.cham., cic.cocc.coff., coll.Con., croc., gels.hyos., Ign.iod.ip.lach., lyc., mag-m.merc., Mosch.nat-m.nit-ac., nux-m.nux-v., op., petr., phos., plat.plb., puls., sec., sep.staph., stram.sulph., sumb., tarent., valer., verat-v.verat.zinc.
++ indigestion, from : Ip.
++ indignation : Staph.
++ injuries, from : Arn., art-v., cic.Hyper.nat-s.œna., op.rhus-t.sulph., valer.
++ intermittent : Absin.

হিস্টিরিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় উপরোক্ত ঔষধগুলি ছাড়াও লক্ষণ ভেদে পোথাস ফিটিডা,জিঙ্ক ভ্যালেরিয়ানা,একুইলেজিয়া ইত্যাদি প্রয়োজন হতে পারে।

 হিষ্টিরিয়ার বাইয়োকেমিক চিকিৎসা ঃ

ক্যালি ফসঃ-হিষ্টিরিয়া রোগের প্রধান ঔষধ।শোক,দুঃখ,ভয়,দুঃশ্চিন্তা,দুর্বলতা ইত্যাদি কারন না থাকলে এই রোগে ক্যালি ফস অব্যার্থ মহৌষধ।

নেট্রাম মিউরঃ-জরায়ু পীড়াগ্রস্থ রোগীনি সর্বদাই দুঃখিত,মেজাজ খিটখিটে,সান্তনা দিলে রেগে উঠে,গরমে কাতর,অত্যন্ত লবন প্রিয় এই লক্ষনের রোগিদের জন্যে নেট্রাম মিউর উপকারি।

 হিস্টিরিয়ার রোগীর পালনীয় আনুষাঙ্গিক ব্যাবস্থা ও পথ্যাদি ঃ

রোগের উপসর্গ দেখা দিলে তাকে চিৎ করে শুইয়ে পরনের বস্র আলগা করে দিতে হবে।চোখে মুখে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।রোগির আসেপাশে লোকজন জমতে দেওয়া যাবে না।রোগিকে খোলা বাতাসের ব্যাবস্থা করতে হবে।চা,কফি,মাদক দ্রব্য,গরম মসলা উত্তেজক খাবার নিষেধ।স্বাভাবিক ঠান্ডা পানিতে গোসল করাতে হবে।পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।
আমার ফ্রী মোবাইল এপসটি ডাউনলোড করুন এবং আমার সকর লেখা আপডেট নিন নিয়মিত।


ডা: ইয়াকুব আলী সরকার
ইভা হোমিও হল।
বাইপাইল,সাভার,ঢাকা।
গোঃ রেজিঃ নং ২৩৮৭৬।
মোবাইল নং ০১৭১৬৬৫১৪৮৮

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন