Homeopathic treatment,research and higher education. |
" হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা।
যে কোন সিস্টেম বিশেষ করে সেটা যদি হয় মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ক তবে তাতে অবশ্যই সর্বোচ্চ লেভেলের উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। কারণ হেলথ সিস্টেমের উপর রয়েছে আমাদের জীবন মরণের সম্পর্ক।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ স্থানেই প্রধান চিকিৎসা ব্যবস্থা হলো এলোপ্যাথি। কিন্তু এলোপ্যাথি সর্বক্ষেত্রেই সবচেয়ে ভাল সেবাটা দিতে পারছে কি? বহুক্ষেত্রেই পারছে না। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে।
★★ একটা কারণ হলো এই চিকিৎসা সেবা ব্যয়বহুল।
=> যেখানে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্রের নিম্ন রেখায় বসবাস করে, যেখানে খাদ্য ও বাসস্থানের প্রয়োজনীয়তা মিটাতে তাদের হিমশিম খেতে হয়, সেখানে প্রচলিত এলোপ্যাথিক চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে যায়।
★★ অপরদিকে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় বহু রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে তেমন সফলতা দেখাতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ভাইরাল ডিজিজ মোকাবেলায় এখনও এলোপ্যাথির সফলতা কম। তাই আমরা দেখি ডেঙ্গি, হাম, চিকেন পক্স, ভাইরাল হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগে এলোপ্যাথির তেমন কার্যকরি ওষুধ নাই।
★★ নতুন করে আরেকটি সমস্যা দেখা দিয়েছে যেটা খুবই ভীতিপ্রদক। সেটা হলো #এন্টিবায়োটিক_রেজিস্ট্যান্স।
=> ব্যাকটেরিয়াগুলো এখন এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। ফলে এমন ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাকটেরিয়া যদি কোন রোগীতে আক্রমণ করে তবে চিকিৎসকদের তেমন কিছু করার থাকে না, কারণ এন্টিবায়োটিক সেখানে কাজ করে না।
২০১৮ সালে শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ-তে মোট ৯০০ রোগী ভর্তি হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৪০০ জন মারা যায়।
এদের প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে তাদের শরীরে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ছিল। (সূত্র বিবিসি নিউজ, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯, অনলাইন)
★★ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রচলিত চিকিৎসার ওষুধের ক্ষতিকর #পার্শপ্রতিক্রিয়া।
=> CDC: Centers for disease control and Prevention এর তথ্যমতে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ হাজারের চেয়ে বেশি মানুষ ড্রাগের ওভারডোজের পার্শপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যু করেছে। (https://www.cdc.gov/drugoverdose/)
এই যদি আমেরিকার মতো দেশের অবস্থা হয় সেখানে আমাদের মত দেশে যেখানে ওষুধের যথেচ্ছার ব্যবহার হয় তার পরিসংখ্যান কত খারাপ হবে।
এখানে আমি কয়েকটি অসুবিধার কথা বললাম। এসব কারণেই উন্নত দেশের পাশাপাশি উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে বিকল্প চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা অত্যাবশকীয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৭৮ সাল থেকে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার আন্দোলনে বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থাকে স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োগের জন্য সকল দেশের প্রতি স্ব স্ব দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করে আসছে।
বাংলাদেশে সরকারের স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে ইউনানী, আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথি বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে স্বীকৃত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এবং বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ ভাগের বেশি মানুষের ইউনানী, আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথির উপর আস্থা ওয়েছে এবং গ্রামীন জনগোষ্ঠির ৮০ ভাগ তাদের স্বাস্থ্য সেবায় এসব পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে। [বাংলাপিডিয়া: bn.banglapedia.org/index.php?title=বিকল্প_চিকিৎসা]
=> বিকল্প চিকিৎসার মধ্যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
হোমিওপ্যাথিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইউ.কে এর তথ্য মতে পৃথিবীর গড়ে ২০০ মিলিয়ন মানুষ নিয়মিতভাবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে। ইউরোপের ৪২ টা দেশের মধ্যে ৪০ টা দেশেই কমবেশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রচলিত আছে। নেদারলেন্ডের চিকিৎসকগনের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক হোমিওপ্যাথিক ওষুধও প্রেস্ক্রাইব করেন।
বেশ কিছু দেশ তাদের জাতীয় চিকিৎসা সেবায় হোমিওপ্যাথিকে অন্তর্ভূক্ত করেছেন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, ব্রাজিল, চিলি, মেক্সিকো, সুইজারল্যান্ড, কিউবা, ইংল্যান্ড।
২৩০ বছর ধরে হোমিওপ্যাথি সাধারণ লোকদের নিকট তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। যারা হোমিওপ্যাথি কাজ করে না বলে অভিযোগ করে থাকেন তাদের জন্য এই তথ্যটাই উপযুক্ত জবাব।
মানুষ যাতে হোমিওপ্যাথির সর্বোচ্চ পর্যায়ের সেবা পেতে পারে সে ব্যবস্থা আমাদের আমাদের দক্ষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশে বর্তমানে হোমিওপ্যাথিক ডিপ্লোমা এবং গ্র্যাজুয়েশন কোর্স চালু আছে।
কিন্তু পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোন প্রতিষ্ঠান নাই।
পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নে রিসার্চ এর বিকল্প নাই।
পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে আমরা অনেক রোগের ব্যাপক আক্রমন দেখতে পাচ্ছি যেগুলো আমাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রচলিত চিকিৎসা কিছু করতে পারছে না, সেখানে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে ভাল ভুমিকা করে আসছে।
একটা উদাহরণ দেই -
Cuba দেশে ১৯৯০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত লেপটোসপাইরসিস রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছিল। ২০০৭ সালে হারিকেন ঝড়ের পর এটা মহামারী আকার ধারণ করে।
লেপ্টোস্পাইরোসিস এর প্রচলিত ভ্যাক্সিন তৈরি করা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। তাই সেখানে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রতিরোধক হিসেবে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। Leptospira ব্যাকটেরিয়া থেকে হোমিওপ্যাথিক পটেন্টাইন্সড মেডিসিন NosLepto তৈরি করা হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকার ২৩ লক্ষ লোকজনকে এই ওষুধ খাওয়ানো হয়। NosLepto 200c খাওয়ানোর ২ সপ্তাহের পর থেকে নতুন আক্রমনের হার কমে যায়। এবং ২০০৮ সাল নাগাদ এর সংখ্যা কমতেই ছিল।
হোমিওপ্রোফাইল্যাটিক (NosLepto 200c) দেয়ায় এই আক্রমের হার ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ৮৪% কমে গিয়েছিল। অপরদিকে অন্য স্থানে যেখানে হোমিওপ্রোফাইলেকটিক খাওয়া হয় নি সেখানে আক্রান্তের হার ২১.৭% বেড়ে গিয়েছিল।
পরিবর্তীতে কিউবান সরকার পুরো দেশেই হোমিওপ্রোফাইলেকটিক খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
একটা মজার তথ্য হলো এই পুরো কাজটি হোমিওপ্যাথরা করে নাই। করেছিল ভ্যাক্সিন এক্সপার্ট এলোপ্যাথিকগণই।
[Homeopathy. 2010 Jul;99(3):156-66. doi: 10.1016/j.homp.2010.05.009.
Large-scale application of highly-diluted bacteria for Leptospirosis epidemic control.
Bracho G1, Varela E, Fernández R, Ordaz B, Marzoa N, Menéndez J, García L, Gilling E, Leyva R, Rufín R, de la Torre R, Solis RL, Batista N, Borrero R, Campa C.]
[https://www.bmj.com/content/345/bmj.e6184/rr/616928]
সম্প্রতি বাংলাদেশে যে ডেঙ্গু জরের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে সেখানেও আমরা হোমিওপ্রফাইল্যাক্লি ব্যবহার করতে পারে। ভারতের সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথি
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময় প্রায় ৪ হাজার লোককে Dengue nosode খাইয়েছিল পরবর্তীতে ২১ হাজারের মানুষের ফলোআপ করতে পেড়েছিল। তাতে দেখা যায় মাত্র ৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল।
সেযাক আমাদের দক্ষ হোমিওপ্যাথ গড়ে তোলার লক্ষে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বিভিন্ন কোর্স চালু করার ভীষণ দরকার। সে লক্ষে বর্তমানে হোমিওপ্যাথিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা অনস্বীকার্য। আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতে হোমিওপ্যাথি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। সেখানে হোমিওপ্যাথির বিভিন্ন সাবজেক্টের উপর এমডি, পিএইচডি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যার, হোমিওপ্যাথির দিকপাল ডা: সাখাওয়াত ইসলাম ভুইয়া স্যার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা রাখি কর্তৃপক্ষ এটির প্রতিষ্ঠায় সদয় দৃষ্টি দিবেন।
Dr. Mohammad Mohshinuzzaman BHMS, PGD
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন