বুধবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৭

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে ফিলোসফি বুঝতে হবে।

হোমিওপ্যাথিক দর্শন।

বিশুদ্ধ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক মানেই কি সকল চিকিৎসায়  স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে ?
অথবা স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলে সে অযুহাতে নানা সঙ্কর প্যাথি করতে হবে ?
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তার মৌলিক ও জরুরি নীতিমালা অনুসারে চিকিৎসা প্রদান করবে, যেখানে প্রকৃত চেষ্টা করার পরও প্রকৃত অর্থেই ব্যার্থ হবে সেখানে অন্য পদ্ধতির চিকিৎসা গ্রহণ করবে। আর এটাই স্বাভাবিক এবং এটাও একটা হোমিওপ্যাথিক নীতিমালা যা অর্গানন অফ মেডিসিন আমাদেরকে শিক্ষা দেয়।হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট এর প্রয়োজনে হসপিটালের সাহায্য নিবে। রোগের প্রচলিত জ্ঞান জানার জরুরি প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ এলোপ্যাথিক চিকিৎসক এর পরামর্শ ও সাহায্য নিবে বা সেখানে রোগী রেফার করবে। বিশেষ প্রয়োজনে সার্জারীর জন্য রোগীকে রেফার করবে বা সার্জনের বিশেষ পরামর্শ নিজের হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগাবে। আমি মনে করি এতে একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কোন ক্ষতি হবেনা, সম্মান নষ্ট হবেনা। এভাবে কাজ করলে হোমিওপ্যাথির, বা হোমিপ্যাথের বা রোগীর কোন ক্ষেত্রেই কোন প্রকার ক্ষতি হবেনা বা অনেক কম ক্ষতি হবেনা।
কিন্তু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক যখন কোন ছোটখাটো অযুহাতে নিজের স্বকীয়তা নষ্ট করে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ফান্ডামেন্টাল নীতিমালা গুলোকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে, প্রমাণিত নীতিমালা ছাড়া প্র‍্যাকটিস করে তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীর এবং হোমিওপ্যাথির ক্ষতি হয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসাবে অঘোষিত যে কমিটমেন্ট থাকে তা লংঘন হয়। যদিও এরকম অপহোমিওপ্যাথি করলে অধিকাংশ হোমিওপ্যাথের ব্যবসায়ীক কোন ক্ষতি হয়না। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হোমিওপ্যাথিক নীতিমালা এবং অঘোষিত কমিটমেন্ট নষ্ট করলে চিকিৎসকের ব্যবসায়ীক সুবিধা বেশি হয়। কিন্তু  হোমিওপ্যাথিক সমাজে দেখা যায়, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ফান্ডামেন্টাল নীতিমালা অনুধাবন করেন না, রোগী পর্যবেক্ষণে হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম অবলম্বন করতে ব্যার্থ হোন, হোমিওপ্যাথিক সংজ্ঞা অনুসারে রোগের জ্ঞান অর্জন করেন না বা করতে ব্যার্থ হোন। হোমিওপ্যাথিক ফিলোসোফি অনুসারে রোগ, চিকিৎসা, আরোগ্য, উপশম, সাপ্রেশান ইত্যাদি বিষয়ে ক্লিয়ার জ্ঞান নাই বা অনেক ভুলের মধ্যে আছেন এসকল অতিব জরুরি বিষয় সম্পর্কিত হোমিওপ্যাথিক পার্টে। অথচ এখানে হোমিওপ্যাথিক একটা সোসাইটির কোন লজ্জা অনুভব হয়না। এসকল অতি জরুরি এবং বাধ্যতামূলক জ্ঞান সম্যকভাবে না থাকলে প্রকৃত হোমিওপ্যাথি প্র‍্যাকটিস করা কস্মিনকালেও সম্ভব না এই অভাবটাও তারা ফিল করেননা। এমনকি দেখা যায় রোগীতে সুস্পষ্ট হোমিওপ্যাথিক প্রেস্ক্রিপশান করার মতো মানষিক, শারীরিক, বিশেষ ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রীক লক্ষণ সমষ্টি থাকা সত্ত্বেও তারা সেগুলো বের করতে পারেন না, মূল্যায়ন করতে পারেন না। ফলে রোগের নামে, শুধুমাত্র সুপারফিশিয়াল ক্লিনিক্যাল কন্ডিশনে মেডিসিন দিতে বাধ্য হোন অনেকে। এখানেও তাদের লজ্জা ফিল হয়না, অনুভব করেন না হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পরিচালনা করার অপরিহার্য মৌলিক জ্ঞান এখনো অর্জন হয়নি।
বরং উল্টো দেখা যায়, যে বিষয়গুলোতে একজন হোমিওপ্যাথ চাইলেই অন্য প্যাথির সাহায্য নিতে পারেন, যে বিষয়গুলোতে একজন হোমিওপ্যাথ এলোপ্যাথিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তুলনায় নিতান্তই কম জ্ঞান রাখেন বা নিতান্ত কম জ্ঞান থাকলেই নিজের হোমিওপ্যাথি প্র‍্যাকটিসটা সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যায় সেগুলো নিয়ে তারা অনেক বেশি ব্যস্ত থাকেন। সেগুলো ভালোভাবে না জানলে লজ্জা ফিল করেন। যদিও তারা প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক জ্ঞানের অভাবে প্রতিদিন হোমিওপ্যাথিক কমিটমেন্ট লংঘন করছেন। প্রতিদিন হোমিওপ্যাথির নামে আরোগ্যের সংজ্ঞা বিপরীতে গিয়ে, হেরিংস ল অফ কিউর এর বিপরীতে গিয়ে, কেন্টস টুয়েলভ অবজারভেশনের বিপরীতে গিয়ে হোমিওপ্যাথিক সাইনবোর্ডে চিকিৎসা পরিচালনা করছেন !!! এসব বিষয়ে এতটাই অনুভবহীন হয়ে এসকল হোমিওপ্যাথ কাজ করেন যে, এরা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার উদ্দ্যেশ্য, হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের উদ্দেশ্য, হোমিওপ্যাথির স্বকীয়তা বেমালুম ভুলে যান। হোমিওপ্যাথি এবং অন্য প্যাথির মৌলিক পার্থক্যগুলো অস্বীকার করে বসেন বা কাজেকর্মে তাই প্রমাণ করেন ।
এরাই তাদের সমালোচনা করেন, যারা হোমিওপ্যাথিক কমিটমেন্ট রক্ষা করে প্র‍্যাকটিস করেন। তাদের সমালোচনা করেন যারা প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক সংজ্ঞা অনুসারে রোগ, চিকিৎসা, আরোগ্য, সাপ্রেশান, হেরিংস ল, কেন্টস অবজার্ভেশন ইত্যাদি মেইনটেইন করে হোমিওপ্যাথি প্র‍্যাকটিস করেন। অথচ হোমিওপ্যাথির স্বকীয়তা বাস্তবায়নে এসকল পিউর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণই অগ্রগামী এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন।
বিশুদ্ধ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ হোমিওপ্যাথির স্বকীয়তা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি হোমিওপ্যাথির সীমাবদ্ধতা এবং নিজের সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করে প্রয়োজনে তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে কার্পণ্য করেন না। জরুরি ও যৌক্তিক প্রয়োজনে সার্জারীর আশ্রয় নিতে লজ্জা বা সংকোচবোধ করেন না। তবে হোমিওপ্যাথির মৌলিক ও অতিব জরুরি জ্ঞান অর্জন না করে হোমিওপ্যাথি প্র‍্যাকটিস করতে তারা লজ্জাবোধ করেন। হোমিওপ্যাথির মৌলিকত্ব নষ্ট করে, নিজের হোমিওপ্যাথিক কমিটিমেন্ট লংঘন করাকে তারা অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করেন।
কারণ হোমিওপ্যাথ হিসাবে নিজের মৌলিক সাবজেক্টের জ্ঞান যার থাকবে না, নিত্যদিনের প্র‍্যাকটিসে নিজের হোমিওপ্যাথিক প্রকৃত পরিচয় ও স্বকীয়তা যার থাকেনা অন্তত আর যাইহোক, তিনি প্রকৃত হোমিওপ্যাথ হতে পারেন না। যদিও এর বাহিরে জ্ঞানের ভান্ডার তার থাকুক অতুলনীয়, অনন্য দৃষ্টান্ত।

লেখকঃ
ডাঃ আফজাল ইসলাম।
ডি.এইচ.এম.এস।

হোমিওপ্যাথিক বিষয়ক আমার মোবাইল এপস ডাউনলোড করুন, নিয়মিত আপডেট নিন। আমার মোবাইল এপসের লিঙ্ক ঃ

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.aslamconsole.android.evahomeohall&fbclid=IwAR3mHp4BauqONW3oiO3eVCVTaCqrsPvcY5Z4qq3826ps_Avf6-wN-SixmEg

ডাঃ ইয়াকুব আলী সরকার।
ইভা হোমিও হল।
বাইপাইল,সাভার,ঢাকা।
মোবাইল নং ০১৭১৬৬৫১৪৮৮।
গভঃ রেজিঃ নং ২৩৮৭৬।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন